স্মার্টফোনে কি কি সমস্যা বেশি হয় জেনে নিন

স্মার্টফোন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দিনের এক মুহূর্তও যেন আমাদের স্মার্টফোন ছাড়া চলে না। কম বয়স থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সের মানুষের জন্য আধুনিক সময়ে সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো স্মার্টফোন। এই ডিভাইসটি আমাদের যেমন সুবিধা দিচ্ছে এটি ব্যবহারেও দিন দিন বাড়ছে বিড়ম্বনা। অসচেতন ব্যবহারের ফলে ডিভাইসগুলো প্রায়শই নানা সমস্যার সামনে দাড় করাচ্ছে আমাদের। চলুন জেনে নিই স্মার্টফোনে কি কি সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়।

স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত কমে কেন?

আপনার একটি স্মার্টফোন আছে নিশ্চয়? বাসা থেকে যখন বের হন তখন নিশ্চয়ই আশা করেন বাসায় ফেরার আগে যেন চার্জ শেষ না হয়। এমনি সবাই আশা করেন কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তা হয় না। কারো কারো ক্ষেত্রে চার্জ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ দুটি। একটি হলো মোবাইল ফোনটি বেশি পুরনো হয়ে গেলে দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো অনচেতন ব্যবহার।

প্রথমেই বলতে হয় অসচেতন ব্যবহারের কথা। স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় আমরা কিছু সাধারণ ভুল করে থাকি। সে ভুলের কারণে খুব দ্রুত আমাদের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায় এবং ব্যাটারিটি ধীরে ধীরে অকেজো হতে থাকে। এক সময় একেবারেই আর চার্জ থাকে না।

সে ভুলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওয়াইফাই, মোবাইল ডাটা, ডিসপ্লে ব্রাইটনেস এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস চালু রাখা। আমরা যখন স্মার্টফোনটি দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করি না তখনও বেশিরভাগ সময় আমাদের মোবইল ডাটা কিংবা ওয়াফাই চালু করে রাখি। এ সময় আমরা ফোন ব্যবহার না করলেও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য স্মার্টফোনকে প্রচুর চার্জ খরচ করতে হয়।

অসাবধানতায় প্রয়োজন না থাকলেও আমরা অনেক সময় স্মার্টফোনের ডিসপ্লে ব্রাইটনেস ফুল করে রাখি যার ফলে দ্রুত ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত ব্রাইটনেসের জন্য চোখও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

যদি আমরা এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে সাবধানে স্মার্টফোন ব্যবহার করি তবে দীর্ঘক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে পারবো। এছাড়া যদি ফোনটি বেশি দিনের পুরনো হয় সেক্ষেত্রে নতুন ব্যাটারি কিনে ব্যবহার করাই উত্তম। ব্যাটারি কেনার সময় দেখে শুনে সর্বোচ্চ গুণগতমান সম্পন্ন ব্যাটারি ক্রয় করুন।

কেন স্মার্টফোনের ওয়াইফাই বার বার ডিসকানেক্ট হয়?

স্মার্টফোনে বার বার ওয়াইফাই ডিসকানেক্ট হওয়া চরম পর্যায়ের বিরক্তিকর। আপনার ক্ষেত্রেও কি এমন হয়েছে? কখনও কি জানতে চেয়েছেন কেন বারবার ওয়াইফাই ডিসকানেক্ট হয়? প্রধানত তিনটি কারণেই এ সমস্যা সবসময় হয়ে থাকে।

প্রথম করণ আপনার স্মার্টফোন নিজেই। আপনার স্মার্টফোনটিতে যদি যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে তবে বারবার ওয়াইফাই ডিসকানেক্ট হবেই। এছাড়াও অনেক আমরা না জেনে অনেক ভুল সেটিংস করে থাকি সে কারণেও হতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে যদি এই কারণটিই সঠিক হয় তবে খুব দ্রুত একজন দক্ষ টেকনিশিয়ানকে দেখান।

দ্বিতীয় কারণ হলো আপনার রাউটার। রাউটার হলো সে যন্ত্র যার মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেট সার্ভিস পেয়ে থাকেন। যদি এই ডিভাইসটিতে ত্রুটি থাকে তবে সে ক্ষেত্রেও ওয়াইফাই বারবার ডিসকানেক্ট হতে পারে। হতে পারে আপনার রাউটারটি অনেক পুরনো তাই আর ডাটা ট্রান্সফার করতে পারছে না। অথবা হতে পারে রাউটারে কোন ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে পারেন।

তৃতীয় কারণ আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অর্থাৎ যার ইন্টারনেট সেবা আপনি ব্যবহার করছেন। তার সার্ভারে পর্যাপ্ত লোড না থাকলে কিংবা যেসব ডিভাইস ব্যবহার করছে তাতে কোন ত্রুটি থাকলেও ওয়াইফাই বার বার ডিসকানেক্ট হতে পারে।

ফোন ল্যাগ করা

স্মার্টফোনের ল্যাগ করা বলতে সহজে বুঝায় ব্যবহার করতে করতে এক সময় হঠাৎ আটকে যায় বা হ্যাঙ করে। বিভিন্ন কারণে ল্যাগ করা বা হ্যাঙ করার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে যখন জরুরি প্রয়োজনের সময় স্মার্টফোন হ্যাঙ করে তবে তখন খুব বিরক্তি লাগে।

হ্যাঙ করার যথেষ্ট কারণ থাকলেও অনেক সময় বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই ল্যাগ করতে পারে আপনার স্মার্টফোন। সেক্ষেত্রে রিবুট করে বা বন্ধ করে চালু করলেই সমস্যার সমাধান হয়। তবে আরও যেসব কারণে স্মার্টফোনটি ধীরগতিতে কাজ করে বা হ্যাঙ করতে পারে সেগুলো হলে:

  • ফোনের ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া
  • পুরনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা
  • ফোনের ক্যাশ মেমোরি কম থাকা
  • একসঙ্গে একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করা
  • পুরনো ব্যাটারি ব্যবহার করা
  • দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা

বারবার স্মার্টফোনর অ্যাপ ক্র্যাশ হয় কেন?

স্মার্টফোনের অ্যাপ বিভিন্ন কারণেই ক্র্যাশ করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন অ্যাপের অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যা হলেই তা বারবার ক্র্যাশ করে। অনেক ক্ষেত্রে ক্র্যাশ না করে হ্যাঙ করা বা রেসপন্স নাও করতে পারে।

আপনার ফোনে যদি এ ধরণের সমস্যা হয় তবে সেক্ষেত্রে অ্যাপটি জোরপূর্বক বন্ধ করে দিতে পারেন অথবা রিমুভ করে নতুন করে ইনস্টল করতে পারেন। তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনটি আপডেট করতে পারেন।

চার্জার কাজ না করা

স্মার্টফোন চার্জ না হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এ সমস্যায় ভুগে থাকেন বেশিরভাগ ব্যবহারকারী। ফোনে চার্জ না হওয়ার প্রধাণ কারণ দুটি। একটি হলো ফোনে সমস্যা অপরটি হলো চার্জার নষ্ট হয়ে যাওয়া।

ফোনে সমস্যা বলতে গেলে বলা হয় চার্জিং পোর্টের সমস্যা। হতে পারে আপনার ফোনের চার্জিং পোর্টে ময়লা জমে গেছে, পানি লেগে ড্যামেজ হয়ে গেছে কিংবা লুজ কানেকশন। এছাড়া চর্জারের ভেতরে কোন সমস্যা হলে স্লো চার্জিং বা ক্ষেত্র বিশেষে চার্জ নাও হতে পারে।

কেন আপনার স্মার্টফোনটি চার্জ হচ্ছে না সেটি আগে বুঝতে হবে। যদি চার্জারর সমস্যা হয় তবে অবশ্যই নতুন একটি চার্জার কিনে নিতে হবে। যদি চার্জিং পোর্ট খারাপ থাকে তবে সেটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার থেকে সারিয়ে নেয়া উত্তম।

বেশি সময় চার্জ করা

যে কোন রিচার্জেবল ডিভাইস ফুল চার্জ হওয়ার পরও চার্জে লাগিয়ে রাখা বিপজ্জনক। ধরুন আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ খেতে পারে কিন্তু আপনাকে যদি জোরপূর্ববক বেশি খাওয়ানো হয় তবে আপনার কেমন লাগবে? অথবা ধরুন এক কেজির একটি ব্যাগে যদি দেড় কেজির পণ্য জোরপূর্বক প্রবেশ করান তবে সেক্ষেত্রে কী ঘটবে?

স্মার্টফোনে বেশি সময় চার্জ করলেও ঠিক একই ঘটনা ঘটবে। ব্যাটারিতে চার্জ ধারণ ক্ষমতার যে সেলগুলো থাকে সেগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ব্যাটারির ধারণক্ষমতা কমে যাবে এবং ব্যাকআপও কমে যাবে নাটকীয়ভাবে। এটি খুব সাধারণ বিষয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি চার্জ দিলে মাদারবোর্ডের কোন যন্ত্রাংশও পুড়ে যেতে পারে।

যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হলো এগুলোই স্মার্টফোনের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। ব্যবহারকারীরা এ সমস্যাতেই বেশি ভুগে থাকেন। তবে যে কোন সমস্যাই হোক না কেন সাধারণ সার্ভিস সেন্টারে না গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার থেকে স্মার্টফোন মেরামতের চেষ্টা করবেন এতে আপনার ডিভাইসটি সুরক্ষিত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *