বর্ষায় যে ১০ জায়গায় ভ্রমণ করবেন

সেরা ১০ পর্যটন কেন্দ্র যা নিয়ে হয়তো দ্বিধায় আছেন সেগুলোর সবার পরিচিত। ধানের দেশ, গানের দেশ বাংলাদেশ অপরূপ রূপের রুপেমা ও মাধুরী মাখা এক স্বপ্নময় দেশ। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই যেন রূপের ছড়াছড়ি। আর তাইতো বাংলাদেশের রূপ মাধুর্য নিয়ে নির্দিষ্ট করেই কোন এলাকাকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। বর্ষার সৌন্দর্য সে তো বলাই যাবে না। বৃষ্টির ছন্দে যখন মন ভেসে যায় অজানা জলের স্রোতে তখন বাংলার সবই সুন্দর। তবু যারা ভ্রমণপিপাসু তাদের বেড়ানোর অনেক হিসেবে নিকেশ থাকে। তাই বর্ষাকালের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান নিয়ে লেখা।

পাঠ্যসূচি লুকিয়ে রাখুন

০১ নিকলী হাওর

নিকলী হাওর সাম্প্রাতিক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ভ্রমণ স্থান। বাংলাদেশের হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলার নাম নিকলী। তখনও ইটনা, মিঠামই আর অষ্টগ্রামের ভাসমান সড়ক সম্পন্ন হয়নি। তখন থেকেই জনপ্রিয়তা শীর্ষে অবস্থান করে নিকলীর হাওর।

নিকলী হাওরে কি কি দেখবেন?

যদি বিশেষভাবে কেউ জানতে চান তবে নিকলী হাওরে দেখার কিছুই নেই। তবে যদি উপভোগ করতে চান অবশ্যই উপভোগ করার মতো শুধু জলই আছে। তবে এ জলের আছে বাহার। সময়ের ব্যবধানে নিকলী হাওরের জল রূপ বদলায়। উত্তাল তরঙ্গের সাথে রোমাঞ্চ নিতে চাইলে কিংবা শান্ত জলের সাথে মিতালী গড়তে চাইলে আসতেই হবে নিকলী হাওর ভ্রমণে। চাঁদনী রাতে শান্ত জলে নৌবিহার আপনাকে সারাজীবন মনে দোলা দেবে। কী দেখবেন আর কী দেখতে চান বাকিটুকু সবটাই আপনার।

কিভাবে যাবেন নিকলী হাওর?

নিকলী যাওয়ার বেশ কয়েকটি প্রবেশদ্বরা আছে। কিশোরগঞ্জ শহর, ভৈরব আর দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে আসলে ইটনা, মিঠামইনের হাওর হয়েও আসা যাবে। যারা ঢাকা থেকে যেতে চান বাসে আসলে মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি কিশোরগঞ্জ ও কটিয়াদী অভিমুখে নন এসি বাস পাওয়া যাবে যাতে ভাড়া গুণতে হবে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এসব চলাচল করে। বলে রাখা ভালো এই রুটে কোন এসি বাস নেই। বিআরটিসির একটি বাস থাকলেও তা কখনো কখনো চোখে পড়ে। ট্রেনে আসলে সকাল ৬টায় এগারসিন্ধুর প্রভাতী ও সন্ধা ৬টায় এগারসিন্দুর গোধুলি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে। সকাল ১০.৩০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসও ছেড়ে আসে যার প্রত্যেকটি কোচ চেয়ার। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২২০ টাকা।

নিকলী হাওরে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

থাকার জন্য নিকলীতে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে যার ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। বর্ষার মৌসুমে ভাড়া এমনই হয়ে থাকে। খাওয়ার জন্য বিশেষ কোন রেস্টুরেন্ট নেই। ছোট ছোট রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বেরিবাধের প্রবেশমুখে দুয়েকটি ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে দাম একটু বেশি হলেও বিভিন্ন রকম খাবার পাওয়া যায়।

০২ রাতারগুল জলাবল, সিলেট

রাতারগুল সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত একটি জলাবল। বছরের বেশিরভাগ সময় জলে ডুবে থাকে বলে এই বনকে জলাবল হিসেবে মানা হয়। পৃথিবীতে যে ২২টি জলাবন আছে রাতারগুল তার মধ্যে অন্যতম। সারাবছরই এ বনে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে তবে বর্ষায় থাকে বিশেষ আকষর্ণ। ডুবন্ত বনের ভেতর গাছপালার গলি পেরিয়ে ভেতরে যেতেই মনে রোমাঞ্চ জাগে, শরীরে জাগে শিহরণ। ছোট ছোট ডিঙ্গি ছাড়া বনের ভেতর প্রবেশ করার বিকল্প কোন উপায় থাকে না।

এই জলাবনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। প্রথমে রাতারগুলকেই বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন হিসেবে মানা হতো। তবে পরে জুগিরকান্দি মায়াবন, বুজির বন ও লক্ষ্মী বাওড় জলাবন নামে আরও জলাবনের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্ষায় ২০-৩০ ফুট পানির নিচের থাকলেও বছরের অন্য সময় ১০ ফুট থাকে রাতারগুল জলাবনে।

কিভাবে যাবেন রাতারগুল?

রাতারগুল যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে সিলেট শহরে। রাজধানী ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন কিংবা বিমানেও যাওয়া যায় সিলেট। শ্যামলী, এনা, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া ও গ্রীনলাইনসহ বিভিন্ন বাসে গাবতলী, শ্যামলী কিংবা ফকিরাপুল থেকে যেতে পারবেন সিলেট। এসিতে ভাড়া গুণতে হবে ১৪০০-১৫০০ এবং ননএসিতে ৫০০-৭০০ টাকা। ট্রেনে গেলে রাজধানী কমলাপুর থেকে যাওয়া যাবে পরাবাত, কালনী এক্সপ্রেস, উপবন কিংবা জয়ন্ত এক্সপ্রেসে।

সিলেট শহর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে রাতারগুল। দলবেধে গেলে ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে লেগুনা পাওয়া যাবে। মানুষ কম হলে সিএনজিতেও যেতে পারেন দামদর আলোচনা সাপেক্ষে।

রাতারগুলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

গোয়াইনঘাট বা রাতারগুলে থাকা ও খাওয়ার বিশেষ কোন জায়গা নেই। সময়ভেদে নতুন কোন জায়গা হলে সেখানে পৌছে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তবে সিলেটের খুব কাছাকাছি হওয়ায় বেশিরভাগ পর্যটকেরই থাকা ও খাওয়ার জায়গা সিলেট শহরেই হয়ে থাকে। তবে ক্যাম্পিং করার ইচ্ছে থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ চেষ্টা করতে পারেন। রাতারগুলে যেহেতু পর্যটকদের রাত্রিযাপন করে না তাই সেখানে থাকা ও খাওয়ার ব্যাপারে একেবারেই উৎসাহ দেয়ার মতো নয়।

০৩ টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ

জলের বুকের সূর্যের খেলা সে হোক সকাল কিংবা সন্ধ্যেবেলা। এমনই এক বর্ষাকালীন ভ্রমণ স্থানের নাম টাঙ্গুয়ার হাওর। জলে জলযান আর অবসরে জলবিহার তারই সঠিক গন্তব্যের নাম টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওর বলতেই বুঝা যায় বর্ষায় সেখানে বিস্তীর্ণ জলরাশি। আর সে কারণেই বর্ষায় জনপ্রিয় এক পর্যটন স্থান টাঙ্গুয়ার হাওর।

সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পর্যটন স্থান। এখানে পাওয়া যায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যঙ, ১৫০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির হাওর। ২০০০ সালে এ হাওরকে রামসার স্থানে তালিকাভূক্ত করা হয়। বর্ষাকালে প্রধানত জলবিহারেই এই হাওরে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা।

কিভাবে যাবেন টাঙ্গুয়ার হাওর?

টাঙ্গুয়ার হাওর যেহেতু সুনামগঞ্জে অবস্থিত তাই আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে সিলেট। সিলেট যাওয়ার উপায় রাতারগুল যাওয়ার মতোই। সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জের বাস পাওয়া যায়। এছাড়াও হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারের সামনে থেকেও সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। তবে কেউ চাইলে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসেও সুনামগঞ্জ যেতে পারেন। সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে তাহিরপুর। ভরা বর্ষায় তাহিরপুর বাজার থেকেই পাওয়া যাবে। এছাড়া সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে সাহেব বাড়ি ঘাট। পরে সেখান থেকে নৌকা করে হাওরে ঘোরা যায়।

টাঙ্গুয়ার হাওরে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

হাওর বলতেই বুঝা যায় শুধু জল আর জল। সেখানে থাকা এবং খাওয়ার কোন রকম ব্যবস্থা নেই। তাই নিজ দায়িত্বেই নৌকায় থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থাপত্র বুঝে নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে। যদি আপনি হাউজবোটে থাকেন তবে থাকা খাওয়া নিয়ে চিন্তা নেই। আর যদি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার রিজার্ভ করে নেন তবে সেক্ষেত্রে বাবুর্চি, বাজারসদাই, রান্নার সরঞ্জাম সব সাথে করে নিতে হবে। ব্যবস্থা না থাকলে নৌকা ঠিক করার সময় মাঝিকে বলেও অনেক সময় ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া যদি অল্প সময় ঘুরে চলে আসেন সেক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ শহরে থাকাই সবচেয়ে ভালো।

০৪ বিছানাকান্দি, সিলেট

জল-পাথরের বিছানায় আচ্ছাদিত সীমান্তবর্তী এই পর্যটন কেন্দ্রের নাম বিছানাকান্দি। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ভারতের সীমানা লাগুয়া মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবিস্থত পাহাড়, নদী আর পাথরের রাজ্য এটি। প্রায় সারা বছরই পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। তবে প্রকৃতির কোলে এর অবস্থান হওয়ায় বর্ষায় যেন যৌবনবতী হয়ে উঠে অপরিমেয় সৌন্দর্যের বিছানাকান্দি। পরিবার, বন্ধু আর প্রিয়জনদের নিয়ে একটু অবসরে ঘুরে আসতেই পারেন।

বর্ষায় উজানের নদী আর ঝর্ণার পানিতে দুকূলে ছাপিয়ে জলের ধারা ছোটে ভাটির টানি। উচুঁনিচু পার্থরের বুক চিরে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলের ধারা এক মোহনীয় দৃশ্য এক মায়া সৃষ্টি করে। অগভীর জলে ডুবে থাকা পাহাড়ের গাড়ে গা লেপ্টে শুয়ে থাকা আর কোথাও সম্ভব নয়। তাই এই বর্ষায় সুযোগ নিতেই পারেন। তবে জল আতঙ্ক থাকলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে বর্ষায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কিভাবে যাবেন বিছানাকান্দি?

প্রথমেই যেতে হবে সিলেট শহরে। সিলেট যাওয়ার উপায় ইতোমধ্যেই বলা আছে। সিলেট শহর থেকে রিজার্ভ অথবা শেয়ার করা সিএনজিতে যাবে হাদারবাজার। রিজার্ভ গেলে ভাড়া নেবে কমবেশি ৫০০ টাকা এবং শেয়ারে গেলে জনপ্রতি ৮০ টাকা। হাদারবাজার থেকে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে বিছানাকান্দি। নৌকা ভাড়া আসা এবং যাওয়ার জন্য দামাদামি করে ঠিক করে নেবেন।

০৫ সুন্দরবন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নোনা পানির বনের নাম সুন্দরবন। বাংলাদেশ ও ভারতের সমুদ্র তীরবর্তী এ বিশাল বন ভাগাভাগি করে নিয়েছে দুই দেশ। বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবন বর্ষায় ভ্রমণের এক অনন্য সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। সারাবছরই এখানে পর্যটকের হিড়িক থাকে তবুও বর্ষায় থাকে অনন্য যৌবনা খাল ও নদীর মেলবন্ধ।

কিভাবে যাবেন সুন্দরবন?

সুন্দরবন বিভিন্ন দিক থেকে যাওয়া গেলেও মোংলা ও খুলনা হয়ে যাওয়াটাই উত্তম। ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, কলাবাগান ও শ্যামলী থেকে খুলনা অথবা মোংলাগামী বাসে চড়া যাবে। এসি ও ননএসি ভেদে ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। সকালে রাজধানীর কমলাপুর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও সন্ধ্যায় চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কেউ চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন।

০৬ জাফলং, সিলেট

দূর দিগন্তে আকাশ ছুঁয়ে দাড়িয়ে পাহাড়গুলো যেখানে ডাকছে সে জায়গাটার নাম জাফলং। সিলেটের জাফলং। সিলেট মানেই জাফলং। এটি এমনটি একটি পর্যটন কেন্দ্র যেখানে পাশাপাশি দুই দেশের পর্যটকদের মিলনমেলা তবুও কেউ কাউকে ছুয়েও দেখতে পারে না। তবুও প্রকৃতির এমন অকৃত্রিম রুপেমায় মন ভুলাতেই সারা দেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। সারা বছর তো ভিড় থাকেই তবে বর্ষায় থাকে অন্য রূপ।

পর্যাপ্ত জল থাকে মেঘালয়ের পাহাড়ী জনপদ মাড়িয়ে আসা ডাওকী নদীতে। ভারত অংশের ঝুলন্ত ব্রিজ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে এপারের পর্যটকদের। সিলেট শহরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় মাত্র দুই ঘণ্টায় সিএনজি বা অটোরিকশায় যাওয়া যায় জাফলং। তাই কিভাবে যাবেন আর কোথায় থাকবেন, খাবেন এ বিষয়ে নতুন কিছু বলার নেই।

০৭ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পটুয়াখালি

সমুদ্র মানেই রাশি রাশি জল। তবুও বর্ষায় কেন যেতে হবে সমুদ্রে। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাস পর পরই বদলায় এই বাংলার রূপ মাধুর্য। শীতের কুয়াকাটা আর বর্ষার কুয়াকাটা কখনই এক নয়। দিগন্তজোড়া সুনলী আকাশ আর ম্যানগ্রোভ বন কুয়াকাটাকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। এছাড়াও এই পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষত্ব হলো এটিই বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা এবং সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সুর্যোদয় এবং সুর্যাস্ত দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন?

পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়া থানায় অবস্থিত তাই দেশের যে কোন জায়গা থেকে পটুয়াখালির বাসে চড়তে হবে। রাজধানী ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ শ্যামলী, কল্যাণপুর, ফকিরাপুল ও কলাবাগান থেকে পটুয়াখালীগামী বাস ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এসি ও ননএসি ভেদে ভাড়া পড়বে ৭৫০-১৬০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের মতো কুয়াকাটায় হোটেল ও রিসোর্টের এত পসরা নেই। তবে থাকা ও খাওয়ার জন্য মোটামুটি মানের ব্যবস্থা রয়েছে। ১০০০-৩০০০ টাকার মধ্যে জিরো পয়েন্টের আশপাশে সব মানের থাকা ও খাওয়ার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট পাবেন।

০৮ শ্রীমঙ্গল চা-বাগান, মৌলভীবাজার

চায়ের রাজ্যের নাম সিলেট আর মৌলভীবাজার। চা কন্যার জেলা মৌলভীবাজার। বর্ষার জলে গা ধুয়ে নতুন রুপে সাজে শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলো। দেশের সব প্রান্ত থেকে পর্যটকরা তাই বর্ষাকালেও ছুটে আসে শ্রীমঙ্গলে। তবে বছরের কোন সময়ই পর্যটকের ভাটা থাকে না। এখানে রয়েছে সিলেটের বেশিরভাগ চা বাগান ও চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। সিলেট শহর থেকে অনায়াশেই ট্যাক্সিবা সিএনজি রিজার্ভ করে চা বাগান ঘুরে আসা যায়।

০৯ নীলাচল, বান্দরবান

নৈসর্গিক প্রকৃতির এক অপরিমেয় সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়ী পর্যটন কেন্দ্রের নাম নীলাচল। এই পর্যটন কেন্দ্রটি সমুদ্রপৃষ্ঠ এত উঁচু যা মেঘের রাজ্যকে ছাড়িয়ে গেছে। মেঘ পেরুলেই নীল আকাশ আর তার নিচেই নীল আচলে ঢাকা বান্দরবানের নীলাচল। বছরের প্রায় সব সময় এখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকলেও বর্ষায় নীলাচলের রূপ মাধুর্য যেন ভুলার নয়। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি ধুয়ে মুছে দিয়ে যায়  যেন জীবনের সব ব্যর্থতার গ্লানি। তাই নিজেকে একবার শুদ্ধ করতে এই বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন বান্দরবানের নীলাচল।

১০ চলনবিল

চলনবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল। এই বিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা ১৪২৪ বর্গকিলোমিটার। তবে কালক্রমে বর্তমানে আয়তন অনেকটাই কমে গেলেও বর্ষায় ভ্রমণে চলবিলের কদর কমেনি একটুকুটুও। পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলাজুড়ে বিস্তৃত এ বিলের রয়েছে ব্যাপক পর্যটক আকর্ষণ। জলের বুকে ভেসে থাকা সবুজ দ্বীপ, বর্ষা ও শরতের পরিবেশ এবং শীতের অতিথি পাখি পর্যটকদের মন ভুলিয়ে দেয় মুহূর্তেই।

চলনবিলে কিভাবে ঘুরতে যাবেন?

চলনবিলের মূল এবং বেশিরভাগ অংশই নাটোর জেলাজুড়ে। তাই চলনবিল যেতে হলে চড়তে হবে রাজশাহীগামী বাসে। নামতে হবে নাটোর জেলার কাছিকাটা নামক স্থানে। সেখান থেকেই চলনবিল যাওয়া সহজ। কাছিকাটা থেকে চলনবিলের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। সিএনজি বা অটো রিক্সায় যেতে পারবেন চলনবিলের মূল ঘাটে। তবে ট্রেনে গেলে যেতে হবে চলনবিলের সিরাজগঞ্জ অংশে। রাজধানী ঢকার গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানী দূর পাল্লার বাস রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

চলনবিলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

নাটোর জেলা শহরে থাকলে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যাবে। এখানে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের হোটেল ও বোর্ডিং পাওয়া যাবে। খাওয়ার জন্য সাধারণ ও মধ্যমানের রেস্টুরেন্ট যেখানে যেমন পাবেন খেয়ে নিতে হবে। সত্যিকার অর্থে থাকা এবং খাওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণই আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে। তবে থাকার ব্যাপারে নিরাপত্তা এবং খাওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্যসম্মত হলে এ নিয়ে ভ্রমণকালে বিশেষ চিন্তা ভাবনা না করাই ভালো।

বর্ষায় ভ্রমণ অনেক জায়গায় করা গেলেও বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করতে উপরের ১০টি সেরা ভ্রমণ স্থানেই বাংলাদেশের পর্যটকরা বেশিরভাগ ভ্রমণ করে থাকেন। তাই চোখ বন্ধ করেই এই বর্ষায় আপনার ভ্রমণসঙ্গীসহ এ স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে আগে ভ্রমণ করেছেন এমন কারো সাথে ভ্রমণ করলে একটু বেশিই উপভোগ করতে পারে। এতে অনেক বেশি জানতেও পারবেন আবার ব্যয়ও কমবে অনেকটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *