ট্রেড লাইসেন্স কি ও কেন দরকার? সহজ বাংলায় বললে যাকে বলতে হয় ব্যবসার অনুমতিপত্র। আরও সহজে যদি বলি আপনি যদি একটি ব্যবসা পরিচালনা করতে চান কিংবা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান তবে সে ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসার বৈধতার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুমতি দরকার। আপনি যদি ব্যবসা থেকে কোটি কোটি আয় করেন আর সেক্ষেত্রে সরকারকে আয়কর না দেন সেজন্য এরকম অনুমতির দরকার। সরকার আপনাকে কিংবা আপনার ব্যবসাকে আইনগতভাবে চেনে না। ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে আপনার ব্যবসার একধরণের পরিচয়ের মাধ্যম যার মাধ্যমে সরকার আইনগতভাবে আপনার ব্যবসাকে চিনে থাকে। সেকারণে অবশ্যই আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া বৈধ ব্যবসা করা কোন দেশেই সম্ভব নয়। এটি একটি ব্যবসার রাষ্ট্রীয় অনুমোদন যার মাধ্যমে সরকার ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কর আদায় করার অধিকার অর্জন করে। আর এই লাইসেন্স ছাড়া যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই অবৈধ যা আইন অনুযায়ী সরকার যে কোন সময় বন্ধ করে দিতে পারে।
ব্যবসার উদ্যোক্তার আবেদনের ভিত্তিতেই যথাযথ কর্তৃপক্ষ ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। ব্যবসার ধরণ, ব্যবসার ভৌগলিক অবস্থান এবং ব্যবসার আকার অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসার অনুমতপিত্রের ধরণ, প্রদানকারী সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। একটি ব্যবসার পরিচালনার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। এক ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স অন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এবং এটি হস্তান্তরযোগ্যও নয়। ব্যবসা শুরু করা কিংবা পরিচালনা ছাড়াও ট্রেড লাইসেন্সের রয়েছে আরও নানা প্রয়োজনীয়তা।
ট্রেড লাইসেন্স কেন দরকার
প্রথমত ব্যবসার আইনগত পরিচয় প্রদানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স দরকার। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসার আইনগত কোন ভিত্তি থাকে না। ব্যবসা পরিচালনা করতে একটি ব্যাংক একাউন্ট একান্তই দরকার। যদি আপনার কোন ট্রেড লাইসেন্স না থাকে তবে কোনভাবেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন না। তাই ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ট্রেড লাইসেন্স অত্যন্ত জরুরি। ব্যাংক ঋণ নিতে গেলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। আপনার ব্যবসার বৈধতার প্রমাণ বহন করে আপনার ট্রেড লাইসেন্স। তাই ব্যাংক যেহেতু অবৈধ কোন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় না সে কারণে আপনার ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। কোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য হতে গেলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আসলেই আছে কি নেই তা বুঝা যাবে আপনার ট্রেড লাইসেন্স দেখে। তাই কোন অপ্রাতিষ্ঠানিক নামকে কোন সংগঠন সদস্যভুক্ত করে না।
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রথমেই ব্যবসার একটি সুন্দর, ব্যবসা সম্পর্কিত এবং আধুনিক নাম ঠিক করতে হবে। পছন্দ করা নামটি পূর্বে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে কিনা তা যাছাই করতে হবে। যদি ব্যবসার ইউনিক নাম পছন্দ করতে পারেন তবেই আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হবে। ব্যবসার সঠিক নাম নির্বাচন হয়ে গেলে আবেদনের ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদনের সাথে ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা ভাড়ায় হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র, জায়গা নিজস্ব হলে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিসহ সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রধান কর কর্মকর্তা, পৌরসভা হলে মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদ হলে চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। এ পর্যায়ে প্রথম ধাপ শেষ হবে। দ্বিতীয় ধাপে আবেদন গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। শেষে লাইসেন্স ফি পরিশোধ সাপেক্ষে ৩-৭ কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।
ট্রেড লাইসেন্সের ফরম পূরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ক্যাটাগরি নির্বাচন করা। সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে ২০১৬ সালের গেজেটে উল্লেখিত ক্যাটাগরি অনুযায়ী আপনার ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। যদি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পৌর এলাকায় কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত হয় তবে এই দুই কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ক্যাটাগরি থেকে আপনাকে ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ফি গেজেটে নির্ধারিত এবং পৌর ও ইউনিয়ন এলাকায় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ১৫% ভ্যাট, সাইনবোর্ড চার্জ এবং লাইসেন্স বইয়ের (যদি থাকে) মূল্য যুক্ত হবে।
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে?
- প্রথমত জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, অফিস বা দোকান নিজস্ব জায়গায় হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ এবং ভাড়া হলে প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার চুক্তিপত্রের কপি।
- পার্টনারশীপ ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই অংশীদারী চুক্তিপত্র লাগবে। এ চুক্তি ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হতে হবে
পার্টনারশিপ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে, ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পার্টনারশিপ চুক্তিপত্র। - লিমিটেড কোম্পানি হলে, মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস এবং সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন লাগবে।
- ফ্যাক্টরি বা কারখানার ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে, প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি বা কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকা ও স্থাপনার নকশা এবং পার্শ্ববর্তী স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিপত্র লাগবে।
- শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, উপরে উল্লেখিত কাগজপত্রের সাথে লাগবে বাড়তি কিছু নথিপত্র যেমন, পরিবেশের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র এবং ফ্যাক্টরি বা কারখানার পার্শ্ববর্তী স্থাপনা বা স্থানের সম্পূর্ণ বিবরণ এবং নকশা।
- সিএনজি স্টেশন অথবা কোন দাহ্য পদার্থের ব্যবসার ক্ষেত্রে, ফায়ার সার্ভিসের ছারপত্র, বিস্ফোরক সনদ এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র অবশ্যই লাগবে।
- প্রাইভেট হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতিপত্র প্রযোজ্য।
- ছাপাখানা অথবা আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনারের অনুমতিপত্র লাগবে।
- রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে মানবসম্পদ রফতানি অধিদপ্তর প্রদত্ত লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে অস্ত্রের লাইসেন্স, ওষুধ অথবা মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্স
ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। উল্লেখিত সকল নথিপত্র প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময় পর পর নবায়নও করতে হতে পারে।