প্রসেসর ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্রাংশের নাম। এটি এক ধরণের চীপ। এই চীপটি আসলে কি তা নিয়ে আমরা কখনোই ভাবি না অথচ কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল কেনার আগে আমরা এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে থাকি।
আমাদের জানার আগ্রহ সীমাবদ্ধ থাকে শুধুমাত্র ডিভাইসের কনফিগারেশনেই। বেশিরভাগ ইলেক্ট্রনিক ব্যবহারকারীই জানি না প্রসেসর কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে। মোবাইল ব্যবহারকারীরা মোবাইল কেনার আগে র্যাম (RAM) এবং রম (ROM) সম্পর্কে জেনেই সন্তুষ্ট থাকি, একইসাথে ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরাও তাই।
এ বিষয়ে হয়তো কেউ কেউ আগ্রহ দেখাই, জানতে চাই অনেক তথ্য কিন্তু আসলেই এটি কিভাবে কাজ করে আমাদের ডিভাইস ব্যবহারে কি কি সুবিধা দেয় তা খুব কম ব্যবহারকারীই জানি। প্রসেসর কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে জানা খুবই দরকার।
Table of Content
প্রসেসর (Processor) কি?
প্রসেসর কাকে বলে কিংবা এটি কি এ নিয়ে অনেকের মাঝেই কৌতুহল রয়েছে। সাধারণ অর্থে বলতে গেলে এটি হলো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। এটি একটি ইংরেজি শব্দ। শাব্দিক অর্থে এটি হলো এমন একটি যন্ত্রাংশ যা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সবকিছু এই যন্ত্রাংশের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। প্রসেস শব্দের বাংলা অর্থ হলো প্রক্রিয়াজাতকরণ।
সাধারণত আমরা প্রক্রিয়াজাতকরণ শব্দটির সাথে উৎপাদন সংক্রান্ত ব্যাপারেই বেশি পরিচিত। যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানায় রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি।
এই চীপ জাতীয় যন্ত্রাংশটির প্রক্রিয়াজাতকরণ বলতে বুঝায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ইনপুট এবং আউটপুট প্রক্রিয়া করণ।
আমরা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসকে অনেক কমান্ড বা নির্দেশনা দিয়ে থাকি সেগুলো প্রথমে একটি হার্ডওয়্যার গ্রহণ করে। দ্বিতীয় ধাপে তা বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কমান্ডটি প্রস্তুত করা হয় এবং শেষে মনিটর বা ডিসপ্লেতে প্রকাশ করা হয় কিংবা যেরকম আউটপুট চাওয়া হয় তা-ই বাস্তবায়ন হয়।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি যে হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজত হয় তাকেই আমরা প্রসেসর হিসেবে জানি। এটি একটি চীপ জাতীয় হার্ডওয়্যার। এর কার্যক্ষমতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কেমন কাজ করবে।
বাজারে অনেক কোম্পানীর অনেক ধরণের প্রসেসর পাওয়া যায়। সবার মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ইনটেল। একটি প্রসেসরের দাম কত? এমন প্রশ্নের এক কথায় কোন উত্তর হয় না। কোম্পানী এবং কনফিগারেশন ভেদে এর দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
প্রসেসরের কাজ কি?
যে কোন ডিভাইসের ইনপুট অংশ থেকে প্রসেসর প্রথমে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন নির্দেশনা ইনপুট (Input) হিসেবে গ্রহণ করে। পরে সে নির্দেশনা মেশিনের ভাষায় পরিবর্তন করা হয় এবং অন্যান্য সকল যন্ত্রাংশকে নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেয় এই চীপটি।
সমস্ত কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে তা আবার আউটপুট (Output) হিসেবে মনিটরের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে প্রদর্শন করা হয়। গোটা প্রক্রিয়াটি অন্যান্য চীপ এবং হার্ডওয়্যারের সাহায়তায় প্রক্রিয়াজাত করাই হলো এই চীপের প্রধান কাজ। তবে সমস্ত প্রক্রিয়াটি একবারেই হয় না।
এার তিনটি প্রধান ইউনিট রয়েছে। যে কোন নির্দেশনা এই তিনটি ইউনিটের সমন্বয়েই হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ইউনিটের কাজের ধরণ আলাদা আলাদা।
প্রসেসরের প্রধান ইউনিট কয়টি?
- গাণিতিক যুক্তি অংশ (Arithmetic & Logic Unit)
- সময় নির্ধারক ও নিয়ন্ত্রণ অংশ (Timing & Control Unit)
- রেজিস্টার অ্যারে ও স্মৃতি অংশ (Register Array & Memory Unit)
গাণিতিক যুক্তি অংশ
গাণিতিক যুক্তি অংশে ব্যবহারকারীর ইনপুটের ভিত্তিতে বিভিন্ন গাণিতিক ও যৌক্তক বিশ্লেণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি প্রথম ধাপ এ ধাপে যদি এ চীপটি সঠিক সমাধান করতে পারে তবেই পরের ধাপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ অংশের ফলাফল মিথ্যা হলে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো এরর (Error) ম্যাসেজ দেখায়।
ধরা যাক আপনি একটি পিডিএফ ফাইল খুলেছিলেন এবং কিছুক্ষণ তা দেখেছেন। একটু পর ফাইলটি আপনি ডিলিট করে দিয়েছেন কিংবা ভুলবশত ডিলিট হয়ে গেছে কিন্তু ফাইলটির হিস্টরিতে দেখাচ্ছে ফাইলটি আছে অথবা আপনি ফাইলে নাম দিয়ে সার্চ করে ফাইলটি ওপেন করার চেষ্টা করছেন তখনই আপনি একটি এরর ম্যাসেজ পাবেন।
আপনি পিডিএফ ভিউয়ারের হিস্টরিতে ফাইলটি দেখতে পেলেও মূলত কম্পিউটারের মেমোরিতে সেটি নেই। এই কাজটি গাণিতিক যুক্তি অংশই করে থাকে। প্রথমত, সাধারণ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে। দ্বিতীয়ত বিভিন্ন যৌক্তিক বিষয়ে সমাধান ও সিদ্ধান্ত দেয়া।
এ অংশে ব্যবহারকারী কোন নির্দেশনা দেয়ার পর অ্যান্ড (And), অর (Or), বাট (But), ইফ (If), নট (Not), ট্রু (True), ফলস (Faulse) ইত্যাদি অ্যারের মাধ্যমে নির্দেশনার যুক্তির সত্যতা যাচাই করে তার সঠিক সিদ্ধান্ত ও সমাধান দেয়। তৃতীয়ত, তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও চীপকে তথ্য স্থানান্তর করা বা নির্দেশ দেয়া এ অংশেরই কাজ।
সময় নির্ধারক ও নিয়ন্ত্রণ অংশ
যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেগুলোতে এ ধরণের চীপস ব্যবহার করা হয় সেগুলোর মূল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় এই ইউনিট থেকে। একটি নির্দেশনা কত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে তা নির্ধারিত হয় এই অংশ।
কম্পিউটার বা মোবাইলকে নির্দেশ দেয়ার পর তা প্রাথমিকভাবে যাচাই বাছাই করা হয় এবং যদি নির্দেশনা বাস্তবায়নযোগ্য হয় তবে তা প্রসেসরের প্রধান মেমোরি ইউনিট র্যামে (RAM) তা জমা হয় এবং এখান থেকে অন্যান্য যন্ত্রাংশ, চীপকে কার্য সম্পাদনের নির্বাহ সংকেত পাঠানো হয়।
স্পেস টেলিস্কোপ ওয়েব কেন তৈরি করা হয়েছে?
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি প্রধানত দুটি বৈজ্ঞানিক উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে।
গাণিতিক যুক্তি অংশের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তা আবার র্যামে গিয়ে জমা হয়। একইসাথে চলতে থাকে ডিসপ্লেতে ফলাফল প্রদর্শনেরও কাজ। সে কারণে এর পাশাপাশি র্যামও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শক্তিশালী র্যাম না হলেও ফলাফল পেতে সময় বেশি লাগতে পারে। এ ধাপে র্যামের অবদান থাকায় র্যামও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
রেজিস্টার অ্যারে বা স্মৃতি অংশ
তৃতীয় ধাপে প্রয়োজন হয় অস্থায়ী মেমোরির। প্রাথমিকভাবে কোন কমান্ড বা নির্দেশনা গ্রহণের পর তা জমা হয় প্রধান মেমোরি বা র্যামে।
তথ্য যাচাইয়ের পর প্রধান মেমোরি যখন কাজগুলো অন্যান্য যন্ত্রাংশকে নির্দেশ দেয় তখন তা অস্থায়ী মেমোরি এবং সফটওয়্যারের সমন্বয়ে প্রক্রিয়াজাত হয়ে ফলাফল প্রসেসরে ফেরত আসে এবং সে ফলাফল আমরা তাৎক্ষণিক ডিসপ্লেতে দেখতে পাই।
প্রসেসর কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উপরের কাজগুলো জানার পর এ প্রশ্নের উত্তরের আর বাকি থাকে না। প্রসেসর হলো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
আমরা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের যত কার্যক্রম দেখে থাকি তার সবগুলোই নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে এই চীপ। চলুন একনজরে এই চীপের প্রয়োজনীয়তা দেখে নিই।
- সঠিক ফলাফল পেতে প্রাপ্ত নির্দেশ বাস্তবায়ন এই যন্ত্রাংশের বিকল্প নেই।
- ডিভাইসের কোন ফাংশন ঠিকমতো কাজ না করলে তা এরর ম্যসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়।
- দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়।
- জটিল, কঠিন ও নির্ভুল গাণিতিক সমাধান পাওয়া যায়।
সেরা প্রসেসর কোনটি?
সেরা প্রসেসর কোনটি তা বলা খুবই মুশকিল। ডিভাইসের ধরণ অনুযায়ী এই চীপসটি ভিন্ন ভন্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি এই চীপ নির্মাণ করা সময় কোন এক ধরণের ডিভাইসকে লক্ষ্য করে তৈরি করে থাকে তাই এককভালো বলা সম্ভব নয় কোনটি সেরা প্রসেসর।
ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইল কিংবা অন্য অনেক ধরণের ডিভাইস আছে যাদের এই যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন রকম। ল্যাপটপের প্রসেসরকে নিশ্চয় মোবাইলের সাথে তুলনা করা যাবে না। তাই ডিভাইস অনুযায়ী কার্যক্ষমতার ভিত্তিতে বলা সম্ভব কোন ডিভাইসে কোনটি ভালো কাজ করছে।