বর্ষার সাজ কেমন হবে?

বর্ষার সাজ তো বাহারি পরিবর্তন নিয়ে আসবেই। এসময় প্রকৃতিও সাজে এক ভিন্ন আমেজে। আষাঢ়ে শুরু বৃষ্টি দিয়ে। টানা বৃষ্টি, ঝুম বৃষ্টি আর ভেজা বাতাস। এসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় বর্ষা বুঝি দরজায় কড়া নাড়ছে। বর্ষা এলেই প্রকৃতি সেজে উঠে অপরূপ সাজে। গাছে গাছে ফোটে কদম, কেয়া। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উকি দেয়া কদম কুঁড়ি আর টিনের চালায় বৃষ্টির ঝুমঝুম ছন্দ সত্যিই মন মাতানো এক আবেশের সৃষ্টি করে। মনের গহীনে ময়ূর যেন পেখম মেলে।

বর্ষায় শহর নয় গ্রামের জীবনধারায় যোগ হয় নতুন নতুন মাত্রা। অটেরিকশা, সিএনজির বদলে যাত্রার সঙ্গী নয় নৌকা। নৌকা সে ইঞ্জিনচালিত হোক কিংবা পালতোলা নৌকা যাত্রাপথে দুই আনন্দের ভ্রমণসঙ্গী। বর্ষার বিচিত্রতা শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্ষা নিয়ে আসে পরিবর্তন। সাজসজ্জা পরিবর্তনের অন্যরকম সময়ই হলো বর্ষাকাল। আমার আমাদের নিত্যদিনের জীবনাচার থেকে শুরু করে বিশেষ দিনগুলোতেও বর্ষার তালে তাল মিলিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখি। পোশাক এবং অন্যান্য গেজেটসহ সবকিছুতেই যোগ হয় নতুন মাত্রা।

বর্ষায় ক্ষণে ক্ষণে বদলায় আকাশ। কখনো কাঠ ফাটা রোদ্দুর, কখনো কালো মেঘের পাহাড় আবার কখনো নীল নীলাম্বরে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। কখনো নামে ঝুম বৃষ্টি। তাই এসময় প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে আমরা পোশাক, গেজেট এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেভাবেই প্রস্তুত রাখি। নতুন করে ভাবি বর্ষার জন্য। বর্ষার সাজ নিয়ে আমরা কম ভাবি না। এ সময় আমাদের মধ্যে যেমন শুরু হয় ব্যস্ততা, তেমনি ফ্যাশন হাউজ এবং টেইলার্সেও বেড়ে যায় ব্যস্ততা। এছাড়া দীর্ঘদিনের রেওয়াজ গ্রামের বিয়ে সাদির আয়োজন বেশিরভাগ বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। তাই বর্ষার সাজ অন্য রকম হয়েই থাকে।

পোশাক
বৃষ্টি হয়ে গেলেই আকাশ হেসে উঠে কিন্তু বৃষ্টির আগে গুমরোমুখো আকাশটা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবে দুই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমাদের পোশাক পরিচ্ছদ হওয়া উচিত মানানসই। বৃষ্টি হোক বা না হোক কাজের জন্য বাইরে অবশ্যই যেতে হবে। তাই মনকে সবসময় চাঙ্গা রাখতে বর্ষার পোশাকের রং অবশ্যই উজ্জ্বল রঙের হতে হবে। কাদা লাগার ভয়তো থাকবেই। পানিতে ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এবং সহজেই কাদা পরিস্কার হয় এমন কাপড় পড়া উচিত। সিল্ক কিংবা জর্জেট এক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। সুতি কাপড় বাইরে না পড়াই ভালো। সুতি কাপড় একবার ভিজে গেলে শুকাতে অনেক সময় দরকার। কাপড়ের রং অবশ্যই উজ্জ্বল হতে হবে। বর্ষায় আপনি পড়তে পারেন নীল, গাঢ় সবুজ, বেগুনী, লাল কিংবা কমলা রঙের পোশাক।

জুতা
পোশাকের মতো জুতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখন বৃষ্টি হবে আর কখন হবে না তা বলা মুশকিল তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে বের হওয়া উচিত। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে জুতা বা স্যান্ডেলের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। বৃষ্টি হলে রাস্তায় কাঁদা থাকতে পারে না হলেও আগের দিনের কাঁদা জমে থাকতে পারে। তাই বর্ষায় চামড়ার জুতা ব্যবহার না করাই ভালো। তবে বর্ষার সাজে কেমন জুতা থাকা দরকার? বর্তমানে বাংলাদশে প্রচুর বার্মিজ এবং ইন্ডিয়ান জুতা পাওয়া যায়। জুতাগুলো রাবারের হলেও দেখতে চামড়ার মতো। অত্যন্ত টেকসই এবং কাঁদায় পা পিছলে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। এছাড়া দেশীয় অনেক রাবারের স্যান্ডেলও পাওয়া যায় আকর্ষণীয় ডিজাইনে। বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমন জুতা ব্যবহার করা উচিত হবে না। এবার দেখতে জুতার ডিজাইন ও রং। গায়ের জামা, প্যান্ট, পাজামার সাথে সামঞ্জস্য রেখে জুতার রং ঠিক করুন। তবে বর্ষায় ব্যবহারের জুতা অবশ্যই হালকা এবং টেকসই হতে হবে। বেল্টওয়ালা জুতা হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সামগ্রী

বৃষ্টি মানেই ছাতা লাগবেই। বর্ষার সাজ আরও আকর্ষণীয় করতে পোশাক ও জুতার সাথে মানানসই একটি ছাতা অবশ্যই হাতের কাছে রাখতে পারেন। আমরা নিয়মিত ছাতা ব্যবহারে অভ্যস্ত নই বলে এটি খুব সহজে হারিয়েও ফেলি। তবুও বৃষ্টির দিনের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো ছাতা। সহজে ব্যবহার করার জন্য ভাজ করে রাখা যায় এমন ছাতাও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি সৌখিন হন তবে এক রঙের ছাতা কিনে তাতে ইচ্ছেমতো হ্যান্ডপেইন্টও করে নিতে পারেন। এই ঋতুতে ছাতার চাহিদা বেশি থাকায় যত্রতত্রই পাওয়া যায় বিভিন্ন রং ও আকারের ছাতা।

রেইনকোটও ছাতার মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। হালকা বৃষ্টিতে ছাতা দিয়ে আপনার রক্ষা হবে ঠিকই কিন্তু বৃষ্টি বেশি হলে শরীরের নিচের অংশ ভিজবেই। সেক্ষেত্রে রেইনকোটের কোন বিকল্পই হয় না। রেইনকোট শুধু আপনাকে সুরক্ষাই দেবে না বর্ষার সাজ পরিপূর্ণ করতে পারে রেইনকোট। বাজারে বিভিন্ন ধরণের রেইনকোট পাওয়ায়। স্বচ্ছ রেইনকোটের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের রেইনকোট আপনি যেখানে সেখানেই পাবেন। তাই স্বচ্ছ রেইনকোট পড়তে পারেন যে কোন পোশাকের সাথে। এছাড়াও উজ্জ্বল যে কোন রঙের রেইনকোট পড়তে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *