অ্যালান  আরকিন: দর্শকের মনের গহীনে সবসময় বেঁচে থাকুক

আমেরিকার বহুমুখী এবং শক্তিমান অভিনেতা অ্যালান আরকিন আর নেই। কমেডি চরিত্রে তার রয়েছে ব্যাপক সফলতা। তার শক্তিমান অভিনয় শৈলীর জন্য ২০০৬ সালে তিনি অস্কার পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত “লিটল মিস সানশাইন” ছবিতে দাদা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অস্কার মনোনীত হন।

বিখ্যাত বিনোদন ম্যাগাজিন ভ্যারাইটি শুক্রবার অ্যালানের পরিবারের বিবৃতি সাপেক্ষে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। মৃত্যুকালে অ্যালান আরকিনের বয়স ছিলো ৮৫ বছর। বিবৃতিতে বলা হয় অ্যালান বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার কার্লসবাদে তার নিজ বাড়িতে মারা গেছেন।

এক যৌথ বিবৃতিতে অ্যালানের ছেলে অ্যাডাম, ম্যাথিও এবং অ্যান্থনি জানিয়েছেন, “আমাদের বাবা একজন শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন। অভিনেতা হিসেবে তিনি শক্তিমান ছিলেন এবং আমাদের বাবা হিসেবেও শক্তিমান ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি একই সাথে একজন প্রেমময় বাবা, স্বামী এবং দাদা।”

অ্যালান উলফ আরকিন 1934 সালের 26 মার্চ  নিউ ইয়র্ক সিটি বরো অফ ব্রুকলিন-এ জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার বয়স 11 তখন তার পরিবার  লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থানান্তরিত হয়। তার বাবা, একজন চিত্রশিল্পী এবং লেখক ছিলেন।

অভিনয়ে কৃতিত্বের জন্য তিনি মোট চারবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনি ব্রডওয়ের শীর্ষ সাম্মাননা পান ১৯৬৩ সালে। কার্ল রেইনার “এন্টার লাফিং” এ তার প্রথম প্রধান ভূমিকার জন্য তিনি এ পুরস্কার জিতেছিলেন।

1966 সালে তিনি প্রথম অস্কার পুরস্কার জিতেন। প্রথম কোন চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে এ পুরস্কার জিতেন। কোল্ড ওয়ার কমেডি “দ্য রাশিয়ানস আর কমিং! দ্য রাশিয়ানস আর কমিং!” মুভিতে সোভিয়েত নাবিকের চরিত্রটি তাকে এমন সুযোগ করে দিয়েছিলো।

তার সর্বশেষ অস্কারজয়ী মুভি “লিটল মিস সানশাইন” এ অভিনয়ের জন্য তাকে প্রথমে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিলো। বলতে গেলে এই প্রত্যাখ্যানই শেষ পর্যন্ত তাকে সেরা অভিনেতা ক্যাটাগরিতে অস্কার বিজয়ী করেছিলো।  চরিত্রটি ছিল একজন নোংরা মুখের 80 বছর বয়সী দাদা যিনি বছরের পর বছর মাদকের অপব্যবহার এবং খারাপ আচরণের কারণে দুর্বল এবং নড়বড়ে ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে অ্যালান আরকিন বলেন, “আমার জীবনে এটিই সবচেয়ে বড় প্রত্যাখানের ঘটনা। ডিরেক্টর আমাকে প্রথমে এ চরিত্রের জন্য উপযুক্ত মনে করেননি। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছিলেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি তার কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। 1967 সালে তার অভীনিত “ওয়েট আনটিল ডার্ক”- মুভির কথা উল্লেখ করেন। মুভিটিতে তিনি একজন সাইকোপ্যাথিক কিলারের চরিত্রে অভিনয় করেন। চরিত্রটি তিনি ঘৃণা করেন। অভিনয়ের স্বার্থে তাকে এই চরিত্রে অনেক হিংস্র হতে হয়, নির্দয় হতে হয়। যার জন্য পরে তিনি অনুতপ্তও হন। নির্মমতা তার একেবারেই পছন্দ ছিলো না। মুভিতে তিনি অড্রে হেপবার্নের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন।

অ্যালান আরকিন 2012 সালে একটি থ্রিলার মুভি “আর্গো” তেও অভিনয় করেছিলেন। এ ছবিতে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ছবির গল্পে ইরান থেকে ছয় আমেরিকানকে মুক্ত করতে একটি সিআইএ মিশনে কাজ করেন তিনি। মিশনে তিনি ছিলেন একজন ক্রু মেম্বার। এই মুভিতেও সেরা অভিনয়ের জন্য তিনি একাডেমি পুরস্কার পান।

আশির দশকে অ্যালান আরকি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনে সমানভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি 2018 সালে আত্মপ্রকাশকারী মাইকেল ডগলাস অভিনীত টিভি সিরিজ “দ্য কমিনস্কি মেথড” এর জন্য প্রশংসা এবং এমি মনোনয়ন জিতেছিলেন।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান মুভির মধ্যে রয়েছে  ১৯৭৬ সালে “দ্য সেভেন-পার-সেন্ট সলিউশন”, ১৯৭৯ সালে “দ্য ইন-লজ”, ১৯৯০ সালে “এডওয়ার্ড সিজারহ্যান্ডস”, ১৯৯২ সালে “গ্লেনগারি গ্লেন রস”, ১৯৯৭ সালে “গ্রোস পয়েন্টে ব্ল্যাঙ্ক”। ১৯৯৮ সালে “দ্য স্লামস অফ বেভারলি হিলস”, ২০০৮ সালে “গেট স্মার্ট”, ২০০৮ সালে “সানশাইন ক্লিনিং”, ২০১২ সালে “স্ট্যান্ড আপ গাইস” এবং ২০১৭ সালে “গোয়িং ইন স্টাইল”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *