পিটা হাস ও নতুন এক বাংলাদেশ

২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়। সব রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেও সমাধানের কোন উপায় খুঁজে পায়নি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস। তখনই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সম্পর্কে ভাটা পড়ে।

সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছালে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে পিটার হাসের সাথে যা নয় তা-ই করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে গোপনে দিল্লিকে দিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগানোরও চেষ্টা চালায় শেখ হাসিনা সরকার।

২০২৩ সালেই পিটার হাসের সঙ্গে কাজ করতে অস্বস্তির কথা ওয়াশিংটনকে জানানো হয়। তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো ‍উত্তাল। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলও আন্দোলনে সরব ছিলো। সেদিন ছিলো ২৮ অক্টোবর। শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন থেকে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়োজিত সরকারি বাহিনী।

একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানী এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বাড়ানোর চুক্তির প্রস্তুতি চলছিলো। চুক্তি সই অনুষ্ঠানের পিটার হাসের পরিবর্তে অন্য করো অংশগ্রহণের দাবি ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের। তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তা কোনভাবেই মানতেই নারাজ।

আরও দেখুন

ট্রাইবুনালে অভিযোগ, শেখ হাসিনার ‍বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
চীনের নদীতে বাঁধ, হুমকিতে ভারত, বাংলাদেশসহ ভাটির দেশগুলো
আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন, পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন দল

শেষ পর্যন্ত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে পিটার ডি. হাসকেই বিশেষ অতিথি করতে বাধ্য হয় সরকার। শেষে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধির চুক্তি সম্পন্ন হয়। এ সময় মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পায়রা বন্দরে আরও একটি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে শিট সই করা হয়।

পিটার হাস সে সময় দেশের আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে নানা উদ্যোগ দেয়। এতে চরম অস্বস্তিতে ভোগে আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মীরা, বিশেষ করে শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে নেতারা তাকে বহিস্কারের সুপারিশ করতে থাকে। তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতারাও পিটার হাসের সমালোচনায় মুখর ছিলো।

বিভিন্ন মারফত আওয়ামী লীগের নেতা ও লবিস্টরা নির্বাচন পর্যন্ত পিটারহাসের তৎপরতা বন্ধের আবেদন জানায় বাইডেন প্রশাসনের কাছে। অথচ একই সাথে পিটার হাসকে হত্যার হুমকিও দেয় বর্বর আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা।

শেষে নিয়োগের ৭ মাস বাকি থাকতে নতুৃন দূত পাঠানোর ঘোষণা দেয় মার্কিন প্রশাসন। এতে বিদায়ী মার্কিন দূতকে নিয়ে সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়ে যখন তিনি বিদায়ী সাক্ষাৎ চাননি। জুলাই আন্দোলন নিয়ে (২১শে জুলাই) সরকারের ব্রিফিংয়ের দু’দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ ছাড়াই পিটার হাস্‌ ঢাকা ছেড়ে যান।

তার কিছুদিন পরই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে দেশ ছাড়েন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। অত:পর শুরু হলো নতুন এক বাংলাদেশের যাত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *