ডিমের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ডিম এমন একটি প্রাণিজ আমিষের উৎস যা সর্বস্তরের মানুষ নিয়মিতিই গ্রহণ করে। সম্প্রতি দেশে ডিমের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে যেন কিনে খাওয়ার যোগাড় নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বারবার অভিযানে ডিমের দাম সম্প্রতি আরও বেড়েছে।
অভিযানের ভয়ে বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ডিমের আড়ত। ফলে বাজারে কমে গেছে ডিমের সরবরাহ। বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা প্রায় সাড়ে চার কোটি অথচ উৎপাদন তিন কোটিরও বেশি হয় না। আগে প্রতি দিন গড়ে সাড়ে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হতো। দৈনিক প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা সালাহ উদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছে।
ডিমের দাম কমাতে সরকার ও ব্যবসায়ীরা কি করছে?
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি) গত ৮ আগস্ট খুচরা বাজারে সোনালী ডিমের দাম বেধে দেন প্রতি ডজন ১৫০-১৬২ টাকা। অথচ গতকাল ঢাকার বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা প্রতি ডজন।
আগে বাংলাদেশে ডিমের বাজার প্রতি ডজন ৮০-১২০ টাকায় উঠানামা করতো। ২০২২ সালে আকষ্মিকভাবে তা ১৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকে যা কখনো কখনো ১৭০-৮০ টাকায়ও বিক্রি হয়। এর আগে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উৎপাদক পর্যায়ে ডিমের দাম বেঁধে দেয়।
তাদের বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের মূল্য ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা।
ডিমের আড়তদারদের দাবি বেঁধে দেয়া দামে বাজারে ডিম সরবরাহ না থাকায় বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার বেশি দামে বিক্রি করায় ভোক্ত অধিকার বারবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করছেন। সেকারণে একরকম বাধ্য হয়েই ডিমের দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
তবে খামারিরা বলছে অন্য কথা। মুরগির দাম, ফিডের দাম, লোড শেডিং ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ বছর ডিমের উৎপাদন খরচে বেড়েছে অনেকাংশে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত মূল্যে বাজারে ডিম সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডিমের বাজারে পূর্ণপ্রতিযোগিতা না থাকায় ডিমের দাম এমন লাগামছাড়া হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ালে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অপরদিকে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সাময়িক ঘাটতি পূরণে গত ৮ অক্টোবর ভারত থেকে সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
তবে শুল্ককর ছাড় না দেয়ায় ডিমের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছে না ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারক পর্যায়ে শুল্ককর ছাড়ের খবর ছড়ালেও কোন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আমদানি করে ডিমের দাম কমার আপাতত কোন সম্ভাবনা নেই।