কুয়েতে প্রবাসীদের একটি আবাসিক ভবনে ভোর ৬টায় হঠাৎঅগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৪১ জন প্রবাসী শ্রমিক নিহত হন। এদের মধ্যে ৪০ জনই ভারতীয় নাগরিক বলে জানা গেছে। শ্রমিকরা ঘুমে থাকা অবস্থায় ছয়তলা ঐ ভবনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তখন ভোর ৬টা। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সকল শ্রমিক। আর তখনই ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় খবর নিশ্চিত করে কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সরকার। বুধবার দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্র্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ আহমেদ ফাহাদ আল-আহমাদ আল-সাবাহ গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করে। রাষ্ট্রীয় গণাধ্যমের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমও।
এ দুর্ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৪ ও পরে ১৫ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কুয়েত পুলিশের মেজর জেনারেল ইদ রাশেদ হামাদ। সর্বশেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় হাসপাতালে ৪৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে কারণ উদঘাটনে কাজ করছে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি। অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে বেশি শ্রমিক একসাথে থাকতে ওই ভবনে। সেকারণেই হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড ঘটলে প্রচন্ড ধোঁয়ায় নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় অনেকের। এ ব্যাপারে আগেই সতর্কতা জারি করেছিলো কুয়েত পুলিশ।
হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বাঁচার উপায় কী?
হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের দেশে যেন ডাল-ভাত। এগুলো যেন নিত্যদিনের অনুষঙ্গ। তবে যদি হঠাৎ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তখন আমাদের কি করা উচিত? চলুন সেগুলোই দেখে নিই।
- শীত কিংবা বর্ষায় অকারণে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা যাবে না। এতে যে কোন সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে রান্না ঘরের দরজা জানালা অন্তত ২০ মিনিট আগে খুলে রাখবেন। এতে ঘরে বিদ্যমান গ্যাস, বাতাস বেরিয়ে যাবে।
- গ্যাসের চাবি অনেক্ষণ অন করে রেখে আগুন জ্বালাবেন না। আগেই ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে নিতে হবে।
- গ্যাসের চুলার হোস পাইপটি ফাটা বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবর্তন করতে হবে দেরি না করে।
- ইলেক্ট্রিকের ওয়্যারিং অন্তত ৬ মাস পরপর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ব্যবহার করতে হবে উন্নত মানের ক্যাবল ও সরঞ্জাম।
- অব্যবহৃত গ্যাজেট বা সরঞ্জাম মূল লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। বেশি লোডের সরঞ্জামের জন্য অতি উন্নত মানের ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে।
- কোনো যন্ত্রই সারা দিন একটানা চালানো উচিত না। বিশেষ করে এসি চালানোর মাঝখানে বিরতি দেয়া দরকার।
- বজ্রপাতের সময় ডিস রাউটার, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বিচ্ছিন্ন রাখা উচিত। বাসা কিংবা অফিসে অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জাম সদা প্রস্তুত রাখতে হবে। এসব সরঞ্জাম ব্যবহারের যথাযথ প্রশিক্ষণও করতে হবে।
আগুন লেগে গেলে যা করণীয়
সতর্ক থাকার পরেও দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এক্ষেত্রে জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর ব্যাপারটাও মাথায় রাখা হয়। তবে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায় সহজেই।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এ সময় তাড়াহুড়ো করলে বিপদ আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই মাথা ঠাণ্ডা রেখে সাধারণ বিচার-বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কেউ বাড়ির ভেতরের কোনো রুমে আটকা পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে রুমের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয়, কাপড় ভিজিয়ে দরজার নিচের ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দিতে হবে যেন আগুনের ধোঁয়া ভেতরে আসতে না পারে। তারপর রুমের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে যারা নিরাপদ স্থানে আছে, তাদের কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবন থেকে বের হবার জন্য লিফট ব্যবহার করা যাবে না। এ সময় সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় যতোটা সম্ভব শরীরের বাড়তি কাপড় খুলে ফেলতে হবে। বিশেষ করে যদি শরীরে কোনো সিনথেটিক জাতীয় কাপড় থাকে তবে তা অবশ্যই খুলে ফেলতে হবে। কারণ সিনথেটিক জাতীয় কাপড়ে আগুন খুব দ্রুত লেগে যাবার আশঙ্কা থাকে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কেউ যদি কোনো মার্কেট বা কারখানায় থাকে, তখন যদি সম্ভব হয়, সুতির কাপড় পানিতে ভিজিয়ে নাকে মুখে চেপে শ্বাস নেয়া জরুরি। এটা ভালো ফিল্টারের কাজ করে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় বাড়ি থেকে সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তা দিয়ে বের হতে হবে। এ সময় লক্ষ্য রাখতে হবে-যে পথ দিয়ে বের হচ্ছেন তার অপর পাশ আপনার জন্য নিরাপদ কি না। যদি তখন আগুনের কালো ধোঁয়ায় ঘর আচ্ছন্ন হয়ে যায়, তবে যতোটা সম্ভব মাটির সঙ্গে শরীর ঘেঁষে নিচু হয়ে বের হতে হবে। কারণ এ ধোঁয়া ফুসফুসে চলে গেলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ সময় ওপরের ঠাণ্ডা বায়ু নিচে নেমে আসে। তাই নিচের বায়ু অনেকটা নিরাপদ। এ বিষাক্ত ধোঁয়া বা গ্যাসে মানুষ প্রথমে অজ্ঞান হয়ে, পরবর্তীতে পুড়ে মারা যায়।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কেউ যদি গাড়িতে থাকে, অবশ্যই তা থামাতে হবে। এ সময় গায়ে আগুন লেগে গেলে ছোটাছুটি না করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রথম কাজ হিসেবে আপনি নিজে নিরাপদ হবেন এবং পরে এলাকার আরো কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে পাঠিয়ে দেবেন। যেন এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কাজ করতে কোনো অসুবিধা না হয় এবং সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, তারা যেন দ্রুত ও সঠিকভাবে কাজটি করতে পারে।
এভাবে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ যদি নিতে পারেন, তবে অগ্নিকাণ্ডের পরেও সুস্থ শরীরে বেঁচে ফিরতে পারবেন এমনটা আশা করাই যায়। সেই সাথে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আলাদা করে মনে করিয়ে দিতে হবে না?
