জি বাংলা চ্যানেলে চলছে সিরিয়াল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকিং করছি। এমন সময় আম্মা আমার রুমে আসলেন। আম্মার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ মুখ ফোলা। মনে হয় অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করেছেন। আম্মার এই অবস্থা দেখে চমকে গিয়ে আম্মাকে বললাম, আম্মা কি হয়েছে তোমার? আম্মা চোখের পানি নাকের পানি মুছতে মুছতে বললেন, কিছু হয় নি রে বাবা। তুই একটা কাজ করতে পারবি, কাল সকালে মসজিদের ইমাম সাহেব আর কয়েকজন এতিম পোলাপানকে দাওয়াত করে বাসায় আনতে পারবি? আমি তাদের কিছু ভালো মন্দ খাওয়াবো। এখন বুঝতে পারলাম আম্মার হয়তো তার ছোট চাচাকে মনে পড়ছে। কারণ কয়েকদিন আগে তার ছোট চাচা মারা গেছেন।
সকাল সকাল আমি ইমাম সাহেব আর কয়েকজন এতিম ছেলে মেয়েদের দাওয়াত করে আনলাম। আম্মা ওদের নিজ হাতে বেড়ে খাওয়ালেন। খাওয়া দাওয়া শেষে ইমাম সাহেব আম্মাকে বললেন, মা জননী এইবার দোয়া করতে হয়। তা কোন উছিলায় আমাদের খাওয়ালেন সেটা কি একটু বলবেন দোয়া করে দিতাম। আম্মা বললেন, বকুল যেনো তার বাবার খুনিকে তাড়াতাড়ি ধরতে পারে সেজন্য দোয়া করেন।
ইমাম সাহেব দোয়া শুরু করলেন। আমিও সবার সাথে হাত তুললাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না আম্মা কোন বকুলের বাবার কথা বলছে। আমাদের মহল্লায় তো একজনেই বকুল আছে। কিন্তু তার বাবা তো খুন হয় নি। গতকাল সন্ধ্যায় কবর স্থানের পাশেই ওনার সাথে আমার কথা হয়েছে। তার মানে কি গতকাল আমি ভূতের সাথে কথা বলেছি! এই কথাটা ভাবতেই আমার সারা শরীরের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গেল।
ইমাম সাহেব দোয়া শুরু করলেন, হে আল্লাহ তোমার দরবারে ২ হাত তুললাম। মানুষ হয়ে মানুষকে কিভাবে হত্যা করে সেটা আমার জানা নাই। কিন্তু যে বকুলের নীরিহ বাবাকে মেরেছে তাকে যেন বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০২ মোতাবেক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
এমন সময় আম্মা ইমাম সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ইমাম সাহেব আপনার দোয়ায় সামান্য ভুল হয়েছে এটা বাংলাদেশ দন্ডবিধি না, এটা হবে ভারতীয় দন্ডবিধি আর হে আরেকটু দোয়া করে দিবেন অন্ধরমহলের অনন্যার যেন টিউমার ভালো হয়ে যায়, কৃষ্ণকলির শ্যামা যেন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সে সুন্দরী হয়ে গেছে, জয়ী যেন দেশের নামকরা ফুটবলার হতে পারে আর সাঁত ভাই চম্পার পারুল যেন আবার জীবন ফিরে পায়।
আম্মার কথা শুনে ইমাম সাহেব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন আর আমি আম্মার দিকে। কাশতে কাশতে ইমাম সাহেব বললেন, কোন এংগেল দিয়ে যে দোয়াটা ধরবো সেটাই বুঝতে পারছি না।
আমি ইমাম সাহেবকে থামিয়ে বললাম, হুজুর এই দোয়া আপনি ধরতে পারবেন না। আপনি হাত তুলুন আমি দোয়া ধরছি, হে আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম। যে এই মরণ মানে জি বাংলা এই বাংলার মাটিতে এনেছে সে যেন দিনে দুপুড়ে ঠাডা (বজ্রপাত) পড়ে মরে। এই সিরিয়ালের জন্য সন্তান আজ মাতৃহারা। আজকাল ঘরে ঘরে পুরুষ নির্যাতিত হয় এই সিরিয়ালের জন্য।
আজকাল মহিলারা ভুলে যায় তার কয়টা সন্তান কিন্তু কোন সিরিয়াল কখন হয় সেটা ভুলে না।
আমার দোয়া ধরা দেখে আম্মা আমায় বিছানার ঝাড়ু দিয়ে সমানে মারছে আর ইমাম সাহেব চিৎকার করে বলছে, ভাই তুই আমিন না বলা পর্যন্ত দোয়া ছাড়িস না। যতই অত্যাচার হোক না কেন তুই দোয়া ছাড়িস না।
বি: দ্র: এই রম্য গল্পটি কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে আঘাত করার জন্য নয়। এই গল্পটি কাউকে উদ্দেশ্য করেও নয়। তবে ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতির করাল গ্রাসে যেভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়েছে তার ভিত্তিতে এই গল্পটি লেখা হয়েছে। গল্পটি হাসির গল্প ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত। এই গল্পের সমস্ত ক্রেডিট যেমন হাসির গল্পের, সমস্ত দায়ভারও হাসির গল্পের। পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্য এই রম্য গল্পটি রিমোট কগ হাসির গল্পের সৌজন্যে প্রকাশ করছে। গল্পের লেখকের এ উপলব্ধি বাংলাদেশি হিসেবে নৈতিক। এতে সকলের বোধদয় হওয়া উচিত।
বিদেশি শিল্পের আগ্রাসনে আমাদের দেশীয় শিল্প যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করবে। ফলে আমাদের দেশে সামাজিক অবক্ষয় বাড়বেই। আজকে দেশে উদীয়মান কিশোর গ্যাং হয়তো এমন পরিবার থেকেই উঠে আসছে। সংসারে ‘মা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। মায়েদের আরও বেশি সচেতনতা শিশুদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারে, অপরাধ প্রবণতা কমাতে পারে। সচেতন পাঠক ও নাগরিকদের এ বিষয়ে আরও সচেতনতা একান্ত কাম্য। আমাদের শিল্প, সংস্কৃতিকে বাঁচানো আমাদের নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।
