সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য এবং আস্থা খান্না

সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত। দৃশ্যায়নের প্রয়োজনেই সিনেমায় এ ধরণের দৃশ্য ধারণ করা হয়। বিশেষত গানের দৃশ্যে কিংবা খলনায়কের কোন কোন দৃশ্যে এরকম দৃশ্য একটু বেশিই দেখা যায়। তবে সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য আসলেই কি খুব জরুরি? অভিনেত্রীরা কি সহজেই নগ্ন দৃশ্যে কাজ করতে রাজি হয়ে থাকেন? আরও অনেক প্রশ্ন আছে আমাদের মনে। যারা সিনেমার সাথে জড়িত কিংবা সিনেমার ইউনিটের সাথে যুক্ত তারাই জানেন আসল সত্য কী?

প্রায় সব দেশের সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য কমবেশি দেখা যায়। তবে সিনেমা যে দেশের সে দেশের সংস্কৃতির সাথে কিছু নগ্নতা সমন্বিত হয়েই থাকে। সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোতে শর্ট ড্রেস (Short Dress) পড়ার রেওয়াজ আছে তাই তাদের নগ্নতার সাথে বাংলাদেশের নগ্নতার অর্থ এক হবে না। গত কয়েক দশকের ভারতীয় সিনেমায় শর্ট ড্রেসের (Short Dress) ব্যবহার বেশি লক্ষ করা গেছে। সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য কিংবা শর্ট ড্রেস (Short Dress) ব্যবহারের পেছনে অনেক গল্প থাকে। কুশীলবদের সাথে অনেক দর কষাকষি, অনেক চুক্তি, শর্ত এবং আরও অনেক কিছু তারপর আমরা তা পর্দায় দেখি।

বলিউড সিনেমা ৭০ এর দশকের পর থেকে জনপ্রিয়। ১৯৮৫ সালে বলিউডের সুপারহিট সিনেমা ‌‘সাগর’। এ সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য নিয়েও তৎকালীন সময়ে কম সমালোচনা হয়নি। সাগর জলে স্নান শেষে ডিম্পল কাপাডিয়া যখন কাপড় বদলাচ্ছিলেন তখন এমন দৃশ্যে তাকে দেখা গেছে। ডিম্পলের গায়ে জড়ানো তোয়ালে খসে পড়ে যাওয়া দৃশ্য পরিস্কার। তবে শুটিং ইউনিটের পক্ষ থেকে এ ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। হতে পারে ঘটনাটি দুর্ঘটনা তবে বর্তমানে কোন নগ্ন দৃশ্যই দুর্ঘটা নয়। নায়িকাদের চুক্তি হওয়ার আগে এমন নগ্ন দৃশ্যের শর্তই আরোপ করা হয়ে থাকে।

‘প্রেম প্রতীজ্ঞা’ ছবিটি রঞ্জিত, মাধুরী দীক্ষিত অভিনিত। এ ছবিতেও এমন দৃশ্যের জন্য বিব্রত হয়েছে নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত। খলনায়কের ভূমিকায় ছিলেন রঞ্জিত। ছবির একটি ধর্ষণের দৃশ্যে আবেগ তাড়িত হয়ে রঞ্জিত সত্যিকার অর্থেই জোর খাটিয়েছিলেন মাধুরীর উপর। রঞ্জিত নিজের ভুল বুঝতে পারায় পরে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে শুধু একটি দুটি সিনেমায় নয় বহু সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য কিংবা খোলামেলা দৃশ্য দেখা গেছে অতীতেও।

বলিউড যদিও কিছু রাখঢাক রেখে এক সময় সিনেমা করতো কিন্তু হলিউড? হলিউড আগে থেকেই সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য পরিবেশন করতো। তবে তাদের নায়িকাদেরও রয়েছে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং অভিযোগ। এক সাক্ষাৎকারে হলিউড অভিনত্রী শ্যারন স্টোন জানিয়েছিলেন, বেসিক ইনস্টিংট’ ছবিতে এক দৃশ্যে ঘরভর্তি অভিনেতার সামনেই তাঁকে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল পর্দায় তাঁর গোপনাঙ্গ দেখা যাবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো। শ্যারনের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও তা মেনেই তাকে চুক্তিতে সই করতে হয়েছিলো।

সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য কতটুকু দেখানো হবে? আসলেই তার কতটুকু দরকার আছে? নায়-নায়িকা স্বাচ্ছন্দ করছে কিনা? অনাকাঙ্খিত ঘটনা হলে কী করতে হবে? এসব অনেক প্রশ্ন থাকে সিনেমায় নগ্ন দৃশ্যকে কেন্দ্র করে। কে দেবেন এসব প্রশ্নের উত্তর? পরিচালক, প্রযোজক নাকি কুশীলব নিজেই। উত্তর দেবেন ভারতীয় সিনেমায় প্রথম ঘনিষ্ঠ দৃশ্য পরিচালক আস্থা খান্না।

আস্থা খান্না ভারতের সর্বপ্রথম ঘনিষ্ঠ দৃশ্য পরিচালক। বেশ কয়েকটি সিনেমায় সহকারি পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন আস্থা খান্না। সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। কারণ এ ব্যাপারে ভারতবর্ষে প্রশিক্ষিত কেউ নেই। নেই কোন নিয়ম কানুম কিংবা আইনগত নির্দেশনা। উন্নত দেশগুলোতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা একজন পরিচালক নিয়োজিত থাকেন কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে এমন কেউ নেই। তাই তিনি অনুভাব করলেন এ বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কারও দায়িত্ব নেয়া উচিত।

সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য শ্যুট করতে হলে তা অবশ্যই একজন ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সমন্বয়কারীর তত্ত্বাবধানে হওয়া দরকার। এরকম দৃশ্যে এরকম একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনেক দায়িত্ব। তাই এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে দেখেন আস্থা খান্না। ২৬ বছর বয়সী আস্থা খান্না নিউ ইযর্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। একটি ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে কীভাবে শট নেওয়া হবে, সেই নিয়েই রিসার্চ করছিলেন, তখনই তিনি বুঝতে পারেন অনেক সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি অত সহজ মোটেই নয়। তাআরপরেই মাথায় আসে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার। Intimacy Professionals Association (IPA)-এ ২০ সপ্তাহের একটি কোর্স করেন তিনি।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য পরিচালনার কাজ করেছেন তিনি। ঢাউশ একটি ব্যাগ নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেটে চলে যান তিনি। আগেই কথা বলেন কলাকুশলীদের সাথে। তার ব্যাগে থাকে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ। নগ্ন দৃশ্যে যেন পুরো নগ্ন না হতে হয় সেজন্য ব্যবহার করে থাকেন বিশেষ পোশাক। ডিওডোরেন্ট স্প্রে, নেইল কাটার, মাউথ ওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন হাইজেনিক কারণে। পুরুষের উত্তেজিত মুহূর্তকে আড়াল করতে ব্যবহার করেন অ্যাথেলেটিক গার্ড। রাবারের কৃত্তিম পুরুষাঙ্গও ব্যবহার করেন নারী কুশলীদের উত্তেজনার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলার জন্য।

সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে আস্থা খান্না যে বিষয়টি অনুভব করেছেন, যে দায়িত্ব নিজে নিয়েছেন তা সিনেমায় নগ্ন দৃশ্য ধারণের সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে চলচ্চিত্র শিল্পের মান যেমন অটুট থাকবে তেমনি অভিনেতা, অভিনেত্রীরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *