ইসলাম ধর্ম কি, কিভাবে এলো এই ধর্ম এ নিয়ে কারো জানার কমতি নেই তবুও অনেক অজানা তো রয়েছেই। ইসলাম অর্থ শান্তি আর ইসলাম ধর্ম হলো শান্তির ধর্ম। বস্তুত সকল ধর্মাবলম্বীরাই নিজেদের ধর্মকে শান্তির বলে দাবি করে তবে ইসলাম অন্যতম। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হলো ইসলাম। পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২ বিলিয়ন। সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৪.৪% মানুষ এ ধর্ম পালন করে। প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম।
ইসলাম একেশ্বরবাদী ইব্রাহিমীয় ধর্ম। এ ধর্মে একমাত্র উপাস্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন। আরবি সিলম ও সালম শব্দমূল থেকে ইসলাম শব্দের উৎপত্তি। শব্দমূল দুটি বেশ কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তার মধ্যে প্রচলিত হলো:
- বাহ্য ও আভ্যন্তরীণ উভয়বিধ অপবিত্রতা (বিপদ-আপদ) ও দোষ-ত্রুটি হইতে মুক্ত (পবিত্র) থাকা
- সন্ধি ও নিরাপত্তা
- শান্তি
- আনুগত্য ও হুকুম পালন।
- আত্মসমর্পণ করা
- কল্যাণ লাভ করা
তবে উভয় শব্দেরই সবচেয়ে গ্রহণযোগ অর্থ হলো আনুগত্য, আত্মসমর্পন ও হুকুম পালন করা। ইসলাম গ্রহণকারীকে বলা হয় মুসলিম। ইসলাম শব্দটির দুটি ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে যাতে ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণ অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমটি হলো ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন করা। মূলত এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করাকে বুঝানো হয়। দ্বিতীয়টি হলো শান্তি। শান্তি বলতে বুঝানো হয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তার সাথে শান্তি স্থাপন করা যার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধতাও পরিত্যক্ত হওয়াকে বুঝায়।
হিন্দুত্ববাদী ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মকে অত্যন্ত প্রাচীন ধর্ম হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বী দাবি করলেও ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী এ ধর্ম সৃষ্টির শুরু থেকেই পালন করা হচ্ছে। সৃষ্টির প্রথম মানব আদম থেকে শুরু করে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত যুগে যুগে আল্লাহ পাক রাব্বুল আল আমিন বহু নবী, রাসূল ও আসমানি গ্রন্থ প্রেরণ করেছেন। সাধারণ মানুষদের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য এটিই ইসলামিক পদ্ধতি। ইসলামের প্রথম নবী আদম (আ.) এবং শেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
নবী মুহাম্মদ (সা.) এর পর আর কোন নবী আসবেন না। তাঁর ওফাতের মধ্য দিয়েই নব্যুয়াতের যুগের সমাপ্তি ঘটেছে। তবে পরবর্তীতে মানুষকে পথ নির্দেশের জন্য ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন ও হাদীস লিখিত নির্দেশনা হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়াও ঐ সময় থেকেই শুরু হয় বেলায়াতের যুগ। আখেরি জামানায় কোরআন হাদীস ছাড়াও সাহাবি, তাবে, তাবে তাবেঈনরা ছিলেন ইসলাম প্রচার, মানুষকে দ্বীনি শিক্ষা প্রদান এবং ইসলামের অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষকে সহায়তা করার জন্য। সর্বশেষ আধুনিক যুগ পর্যন্ত আউলিয়া কেরামগণ মানুষের পাশে সবসময় আল্লাহ ও রাসূলদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ আদম (আ.) থেকে শুরু করে ইসা, মুসা এবং মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত যুগে যুগে যত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের সবারই উপরই আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর নাযিল করেছেন আল কোরআন যা পূর্বে সকল নবী ও রাসূলদের উপর অবতীর্ণ কিতাবগুলোর সর্বশেষ, পূর্ণাঙ্গ ও অপরিবর্তনীয় সংস্করণ। সে কারণে আধুনিক ইসলামের সূত্রপাত গণনা করা হয় ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের সময় থেকে। সে হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের মূল ৪ ধর্ম হিন্দু, বৌদ্ধ, খিষ্টান ও ইসলামের মধ্যে ইসলাম হলো সবচেয়ে নতুন এবং সমসাময়িক। কারণ পরকাল বা কেয়ামতের আগে ইসলাম ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি ও ধর্মগ্রন্থে আর কোন পরিবর্তন আসবে না।
ইতিহাসগতভাবে সপ্তম শতক থেকে ইসলামের প্রসার শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নব্যুয়াতের পর থেকে সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্ম পালনকারীর সংখ্যা অভাবনীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে। সপ্তম শতকে মক্কা এবং অষ্টম শতকে পশ্চিমে ইবেরিয়া (বর্তমান স্পেন) থেকে পূর্বে সিন্ধু নদ (বর্তমান পাকিস্তান) পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি ছিলো। ঐতিহ্যগত কারণেই অষ্টম শত থেকে তের শতক পর্যন্ত সময়কে ইসলামের স্বর্ণযুগ বলা হয়।
ইসলাম ধর্ম পালনকারীদের পাঁচটি মূল বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। এই ধর্মের মূলে রয়েছে এই বিষয়গুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। বিশ্বাসগুলো হলো
- ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
- আসমানী কিতাবমূহে বিশ্বাস
- নবী-রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস
- কেয়ামতের প্রতি বিশ্বাস
- তকদির বা ভাগ্যের উপর বিশ্বাস
ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শহর হলো মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেম। সর্বশেষ মদিনার মসজিদে নববী থেকে সারাবিশ্বে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছিলো এবং ইব্রাহিমীয় ধর্মের সাথে আধুনিক ইসলাম ধর্মের মূল সম্পর্ক স্থাপিত হয় মক্কার কিবলা বা কাবা ঘর থেকে। মুসলমানদের প্রধান ইবাদত সালাত বা নামাজ। নামাজ আদায় করার জন্য মুসলমানদের কিবলামুখী হয়ে তা সম্পন্ন করা হয়। তাই কাবাঘরের চারপাশে দাঁড়িয়ে মানুষ সালাত আদায় করেন। এবং দূরবর্তী স্থান কিংবা দেশের মুসলিমদেরও কিবলা একই হওয়ায় প্রতেককে নিজের অবস্থান থেকে কিবলামুখী হয়েই সালাত আদায় করতে হয়।
