প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে অন্যতম এবং সবচেয়ে গভীরতম মহাসাগর। পৃথিবীর প্রায় ৩২% এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই মহাসাগর। এর অতল গভীরে রয়েছে প্রায় ২৫০০০ দ্বীপ।
প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণির অভয়াশ্রম। এই মহাসাগর সম্পর্কে আমরা যেমন অনেক কিছু জানি একইভাবে অনেক অজানা রহস্যও আছে যা আমাদের প্রায় অজানা। কী রহস্যে ঘেরা প্রশান্ত মহাসাগর?

০১. পানির নিচের আগ্নেয়গিরি
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরিগুলোর একটি প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে অবস্থিত। বিশাল এই আগ্নেয়গিরির নাম হাভরে আগ্নেয়গিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি প্রায় ৩০০০ ফুট বা ৯১৪ মিটার গভীরে অবস্থিত।
২০১২ সালে ৯০ দিন ধরে একটানা ১৪টি জ্বালামুখ থেকে লাভা নির্গত হয় যা দৃশ্যমান ছিলো না। একটি বাণিজ্যিক বিমান আগ্নেয়গিরি এলাকার উপর দিয়ে ভ্রমণ করার সময় পানিতে অদ্ভূত কিছু দেখতে পায়।
পরে সে এই অদ্ভুত বিষয়টি নিয়ে একজন ভূতাত্ত্বিকের সাথে যোগাযোগ করেন। তার বর্ণনা শুনে ভূতাত্ত্বিকরা অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ হন। এই অনুসন্ধানেই সাগরে নিমজ্জিত এই আগ্নেয়গিরি আবিস্কৃত হয়।
এ পর্যন্ত যা অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে তার প্রায় ৭০% পানির নিচে হওয়ায় বিজ্ঞানীদের এই ঘটনাগুলো বুঝতে সমস্যা হয়। শীতল জল, জলের চাপ এবং ম্যাগমার মিথস্ক্রিয়ার কারণে অগ্ন্যুৎপাতের লাভার ধরণ বিভিন্ন হওয়ায় তা আরও জটিলতা সৃষ্টি করে। এই মিথস্ক্রিয়া কিভাবে বিভিন্ন ধরণের লাভা সৃষ্টি করে তা নিয়েই এখনও চলছে গবেষণা।

০২. প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চ
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম পরিখা যা পানির নিচে অবস্থিত। পশিশ্চম প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ৩৬,০৮৯ ফুট বা ১১,০০০ মিটার গভীরে অবস্থিত। এর গভীরতম অংশকে চ্যালেঞ্জার ডিপ বলা হয়। এই পরিখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৮০ মাইল বা ২,৫৪২ কিলোমিটার। উচ্চতায় যেমন মাউন্ট এভারেস্ট যতটা উচু তার চেয়েও বেশি গভীরে অবস্থান এই পরিখার।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এতটাই গভীরে অবস্থিত যেখানে গবেষণা চালানোও প্রায় অসম্ভব। পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্গম স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এ পর্যন্ত বহুবার সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সম্ভব হয়নি। খুবই সম্প্রতি ডুবোজাহাজ ডিপ সি চ্যালেঞ্জারটি নিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জেমস ক্যামেরন একটি অভিযান চালান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে। তিনি সর্বোচ্চ ৩৫,৭৫৪ ফুট বা ১০,৮৯৮ মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন।
০৩. গভীর সমুদ্রের অজানা প্রজাতির প্রাণি
সমুদ্রে জলের নিচে কারা বাস করে? জানলে অবাক হবেন আমরা অনেক কিছু জানি সামুদ্রিক প্রাণি সম্পর্কে, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অনেক ভিডিও চিত্রও দেখি। কিন্তু যা দেখানো সম্ভব হয়নি এমন অনেক দৈত্যাকার প্রাণিরাও বাস করছে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তলে। তাদের বলা হয় সমুদ্রের দানব।
সমুদ্রের পানির যতই নিচে যাওয়া যায় ততই পানির চাপ বাড়তে থাকে, কমতে থাকে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা কমতে কমতে কোন কোন জায়গায় হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে যায়।
এমন প্রতিকূল পরিবেশে সাধারণ প্রাণির বসবাস প্রায় অসম্ভব তবে সেখানেও বাস করছে কিছু প্রাণি। এগুলো সাধারণণ প্রাণি নয়, বিশাল আকারের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি। এখানে বাস করে দৈত্য স্কুইড, দানব তিমিসহ অজানা অনেক বৃহৎ সামুদ্রিক প্রাণি।
সাগরের নিচে থাকা এসব প্রাণির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও সঠিক কিছু বলছে না। তবুও অনেক গুজব আমরা চারদিকে শুনতে পাই। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এখনও অনেক অজানা প্রজাতির প্রাণি সমুদ্রের তলে লুকিয়ে আছে। তাদের আবিষ্কারে গবেষণাও চলমান।
২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চিলির উপকূলে ১০০টিরও বেশি অজানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণির সন্ধান মিলেছে। আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক আর্চিন, মোলাস্ক এবং লবস্টার। বিজ্ঞানীদের দাবি সবগুলো প্রাণির প্রজাতি শনাক্ত করতে সময় লাগবে অন্তত কয়েক বছর। তবে চিলির উপকূলে কোন দানব ভেসে উঠেনি তবে ভবিষ্যতে যে উঠবে না তা বলতে পারছে না বিজ্ঞানীরা।

০৪. ভৌতিক জাহাজ
ভৌতিক জাহাজ হলো এমন এক ধরণের জাহাজ যাতে কোন যাত্রী থাকবে না। সমুদ্রে ভাসমান এমন অনেক জাহাজের গল্পই আমরা শুনতে পাই। কোন বিশ্বস্ত সূত্র না থাকলে এমন অনেক গল্প প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তবে প্রশান্ত মহাসাগরে এমন জাহাজ বাস্তবেও আবিস্কৃত হয়েছে।
১৯৫৫ সালে আমেরিকার এক বণিক জাহাজের ২৫জন ক্রু রহস্যজনকভাবেই নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে শুধু জাহাজটিকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, সেখানে কেউ ছিলো না। যাত্রীদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে।
কেউ মনে করেন বীমা জালিয়াতির জন্য তাদের মেরে ফেলা হয়েছে, কেউ ধারণা করছেন তারা জাপানিজদের আক্রমণের শিকার আবার কেউ কেউ ভাবছেন জাহাজে বিদ্রোহ হয়েছিলো। সঠিক কোন তথ্য না পাওয়ায় ঘটনাটি এখনও রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।
২০২১ সালে একটি ডুবন্ত আগ্নেয়গিরি টোকিওর কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে ২৪টি ভূতুড়ে জাহাজ সমুদ্রে ভাসিয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইও জিমার যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী ২৪টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল। জাহাজগুলো মার্কিন নৌবাহিনী বন্দী করেছিলো।
সুরক্ষার জন্য এগুলো উপকূলের কাছাকাছি ব্রেকওয়াটারে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিলো। হয়তো আরও ভুতুড়ে জাহাজ সমুদ্রে ভাসার জন্য অপেক্ষা করছে, যা আরও রহস্য তৈরি করবে তবে বিষয়টি সমাধান করা দরকার।

০৫. ইয়োনাগুনি মনুমেন্ট
ইয়োনাগুনি মনুমেন্ট হল জাপানের ইয়োনাগুনি দ্বীপের উপকূলে অবস্থিত একটি চিত্তাকর্ষক আন্ডারওয়াটার স্ট্রাকচার, যা একইভাবে গবেষক এবং অভিযাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৮৬ সালে একটি ডুবুরি দল এই স্ট্রাকচারটি আবিস্কার করে।
এই নিমজ্জিত কাঠামোটি বিশাল সমতল সোপান, তীক্ষ্ণ কোন এবং স্তম্ভ নিয়ে গঠিত যা দেখতে অবিকল মানবসৃষ্ট কাঠামোর মতোই।
কিছু ভূতাত্ত্বিক যুক্তি দেন স্তম্ভটি হাজার হাজার বছর ধরে টেকটোনিক কার্যকলাপ এবং ক্ষয়ের ফলে একটি প্রাকৃতিক গঠন।
অন্যরা বিশ্বাস করেন যে এটি একটি প্রাচীন সভ্যতার অবশেষ হতে পারে, সম্ভবত ১০,০০০ বছর আগের বরফ যুগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে নিমজ্জিত হয়েছিল। তারা মানুষের কারুশিল্পের প্রমাণ হিসাবে কাঠামোর সোজা প্রান্ত এবং আপাত খোদাইকে নির্দেশ করে।
এর উত্স নির্বিশেষে, ইয়োনাগুনি স্মৃতিস্তম্ভ অনুসন্ধানকারী এবং গবেষকদের অনুসন্ধান ও গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। ধারণা করা হয় এটি মানব ইতিহাসের একটি হারিয়ে যাওয়া অধ্যায়ের স্মারক।
সম্ভবত আটলান্টিসের মতো একটি প্রাচীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে এই স্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভের রহস্য, প্রশান্ত মহাসাগরে নিমজ্জিত সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্যগুলোর মধ্যে একটি।
০৬. রহস্যময় শব্দ
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সংক্ষেপে NOAA) হলো একটি মার্কিন বৈজ্ঞানিক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা যা আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মহাসাগরীয় এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ, গভীর-সমুদ্রে অনুসন্ধান পরিচালনা এবং মাছ ধরার ব্যবস্থাপনার নিয়ে কাজ করে।
তারা বছরের পর বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের রহস্যময় শব্দ নিয়ে তদন্ত করছে। দ্য ব্লুপ, দ্য আপস্যুইপ এবং স্লো ডাউন এই কয়েকটি বিস্ময়কর শব্দ যা রেকর্ড করা হয়েছে। NOAA সাগরে শব্দের ডিজিটাল রেকর্ড সংগ্রহ করতে সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাইড্রোফোন ব্যবহার করে।
১৯৯৭ সালে এনওএএ ব্লুপ শব্দটি অতি-নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সনাক্ত করা হয়েছিল। রহস্যময় পানির নিচের শব্দটি হয় বরফের কম্পন বা অজানা জীবন্ত প্রাণীর বলে ধারণা করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে ন্যারোব্যান্ড আপ-সুইপ শব্দ আবিস্কার করে সংস্থাটি।
একই সময় একটি ট্রেনের এমন শব্দের সাথে মিল খুঁজে পাওয়ায় রহস্যের কিছুটা সমাধান পাওয়া যায়। এটি এখনও বসন্ত এবং শরত্কালে শোনা যায়, তবে আসল কারণ এখনও একটি রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।
০৭. বিলুপ্ত দ্বীপপুঞ্জ
আমরা সবাই আটলান্টিসের গল্প শুনেছি, তবে অন্যান্য আরও দ্বীপ রয়েছে যা প্রশান্ত মহাসাগরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অংশ তেওনিমানু দ্বীপটি শত শত বছর আগে দ্রুত ডুবে যাওয়ার পর অদৃশ্য হয়ে গেছে।
সম্ভবত, কোন বড় ধরণের ডুবো আগ্নেয়গিরি প্রভাবে দ্বীপটি পরে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি একটি বিশাল ভূমিধস সৃষ্টি করে যার ফলে দ্বীপের কিছু অংশ পানির নিচে চলে যায়। শেষে বড় কোন সুনামির ঢেউয়ে ডুবে যাওয়া দ্বীপটি একেবারেই হারিয়ে যায়।
১৭৭৪ সালে, ক্যাপ্টেন জেমস কুক স্যান্ডি দ্বীপের তালিকা তৈরি করেছিলেন এবং এটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর কেন্দ্রিক আলোচিত কুকের চার্ট অফ ডিসকভারিজে রেকর্ড করা হয়েছিল।
১৮৭৬ সালে ভেলোসিটি নামের একটি জাহাজ স্যান্ডি আইল্যান্ডের রিপোর্ট করার পর দ্বীপটি আবারও আলোচনায় আসে। পরে এটি বিভিন্ন মানচিত্রে দ্বীপটিকে উল্লেক করা হয়েছিল। কিছু বছর আগে দ্বীপটি গুগল ম্যাপেও দেখা গেছে।
২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ান একজন বিজ্ঞানীয় দ্বীপটি আবিস্কারের জন্য অনুসন্ধান চালিয়েও ব্যর্থ হন। তিনি সমুদ্রের ৪,৩০০ ফুট বা ১,৩১০ মিটার গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান করেন।
তার অনুসন্ধানের পর দ্বীপটি নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। আসলেই কি দ্বীপটির কোন অস্তিত্ব ছিলো? এটি কি রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে?

০৮. আবর্জনার দ্বীপ
আবর্জনার দ্বীপটি গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ নামে পরিচিত। মূলত দ্বীপটি হলো প্রশান্ত মহাসাগরে ভাসমান সামুদ্রিক আবর্জনার একটি দ্বীপাকার স্তূপ।
জাহাজ থেকে ফেলে দেয়া বিভিন্ন বর্জ্য যেমন কোকের বোতল, বার্গারের মোড়ক এবং অন্যান্য আবর্জনা একসাথে ভাসতে পূর্ণ একটি বড় দ্বীপের আকার ধারণ করেছিলো।
তবে এটি আসলে বেশিরভাগই মাইক্রোপ্লাস্টিক নামক প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো সবসময় খালি চোখে দৃশ্যমান হয় না এবং এগুলো জলকে স্যুপের মতো দেখায়।
এগুলো প্লাস্টিকের বোতল এবং অন্যান্য প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয় যা ভাঙতে শুরু করে কিন্তু আসলে কখনই পানিতে দ্রবীভূত হয় না। প্রায় ৭০% আবর্জনা গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচে পানির নিচে শেষ হয়।
আবর্জনার এই স্তূপটি এত বিশাল যে, বিজ্ঞানীরা ধারণাই করতে পারছে না এতে কি পরিমাণ প্লাষ্টিক রয়েছে। এটি অপসারণ করাও অনেক ব্যয়বহুল যে কারণে এটি অপসারণের জন্য কেউ উদ্যোগও নিচ্ছে না।
এই স্তূপটির সবচেয়ে বড় রহস্য হলো এটি সামুদ্রিক পরিবেশকে কতটা ক্ষতি করছে কিভাবে প্রভাব ফেলছে তা এখনও আবিস্কার করা যায়নি।
আমরা জানি সামুদ্রিক আবর্জনা সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান ও জীবজগতের জন্য হুমকি কিন্তু এই আবর্জনার স্তূপটি ভবিষ্যতে আমাদের কোন ঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড় করাবে তা আমাদের অজানা।
০৯. অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা
প্রশান্ত মহাসাগর বেশ কয়েকটি রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য হওয়া বা বিলীন হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে যা বেশ আলোচিত। তবে সবচেয়ে সুপরিচিত হলো অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টের বিমান দুর্ঘটনা। বিমানের ধ্বংসাবশেষটি কখনই পাওয়া যায়নি, ধারণা করা হয় জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বিমানটি প্রশান্ত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। কার্লো জিউসেপ্পে বার্তেরো, একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, তাহিতি থেকে চিলির যাত্রায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। মিলড্রেড ডোরান এবং উইলিয়াম পোর্টউড এরউইন ছিলেন পাইলট যারা বিখ্যাত ডোল এয়ার রেসের সময় দুই দিনের ব্যবধানে নিখোঁজ হয়েছিলেন। প্রশান্ত মহাসাগরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে চার্লস উলম, রিচার্ড হ্যালিবার্টন, পল মুনি, থিওডোর কারা এবং গেরি রফস।
প্রশান্ত মহাসাগরও শয়তানের সাগরের আবাসস্থল, যেখানে অনেক বিমান এবং জাহাজ রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ডেভিলস সাগরের অবস্থান জাপানের উপকূলে। এই অঞ্চলে অদ্ভুত নিখোঁজের জন্য বিজ্ঞানীদের কিছু ব্যাখ্যার মধ্যে রয়েছে পানির নিচের আগ্নেয়গিরি, মিথেন হাইড্রেট, উত্তপ্ত এবং ঠান্ডা স্রোত যা অশান্তি সৃষ্টি করে এবং ভূমিকম্প। এছাড়াও অনেক ঘটনাই আমাদের অজানা যেগুলো রহস্যাবৃত।
১০. হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ মু
প্রশান্ত মহাসাগরে ১০,০০০ বা ৫০,০০০ বছর আগে আরও একটি মহাদেশ ছিলো বলে কেউ কেউ মনে করেন। তারা দাবি করে মু নামে একটি মহাদেশ ছিলো যা এক সময় হারিয়ে গেছে। এই মহাদেশকে কেউ কেউ লেমুরিয়া নামেও চেনেন। ধারণা করা হয় এই মহাদেশে ৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করতো। তারা নাকাল সভ্যতার অধিবাসী ছিলো বলে মানা হয়। ব্রিটিশ আমেরিকান লেখক অগাস্টাস লে প্লানজিনের লেখায় মু সম্পর্কে প্রথম উল্লেখ করা হয়। তিনি মনে করেন মিশর এবং মেসোআমেরিকা সৃষ্টিই হয়েছে মু মহাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য।
মু স্পর্কে পরে জেমস চার্চওয়ার্ডের অনেক লেখায় উল্লেখিত হয়। তিনি মনে করেন মহাদেশটি পূর্ব থেকে পশ্চিম ইস্টার দ্বীপ এবং মারিয়ানাসের মধ্যে কোথাও অবস্থিত ছিলো। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণে হাওয়াই এবং মাঙ্গিয়ার মধ্যে কোথাও অবস্থিত ছিলো। চার্চওয়ার্ড ধারণা করেন ধারাবাহিক ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে মহাদেশটি বিলীন হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে ভূতাত্ত্বিকরা মু’র এই মিথকে বিশ্বাস করেন না। তারা মনে করেন এত অল্প সময়ে একটি মহাদেশের বিলীন হয়ে যাওয়া অসম্ভব।
পৃথিবীতে এমন অনেক আর্শ্চই আছে যা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হই। তবে বাস্তবতা কি তা কেবল বাস্তবেই দেখা ও বুঝা সম্ভব। প্রশান্ত মহাসাগর বিশ্বের অন্যতম এবং সবচেয়ে রহস্যময় মহাসাগর। যারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে বাস করেন কেবল তারাই আমাদের চেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা রাখেন। তবে যারা গবেষণা করছে তারা এই মহাসাগরের সবদিক নিয়ে কাজ করেন। উল্লেখিত ১০টি ঘটনাই গবেষকদের দ্বরা প্রমাণিত বাস্তব সত্য ঘটনা।
