সুস্থ শরীর নিয়ে রোজা রাখা সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের একান্ত কর্তব্য। তবে আমরা কি সত্যিই সবাই শারীরিক সুস্থতা বজায় রেখে রোজা রাখতে পারি? কিভাবে আপনি রমজানেও শরীর সুস্থ রাখতে পারবেন?
কেন আপনি অসুস্থ হয়ো যান এ বিষয়ে আপনাদের গুরুত্বপুর্ণ কিছু তথ্য জানাবো। রমজানে সুস্থতার সাথে সিয়াম পালন করতে এই তথ্য ও পরামর্শগুলো অবশ্যই আপনার জানা উচিত।
রোজার সাথে সুস্থ শরীরের সম্পর্ক কি?
রোজার সাথে সুস্থ শরীরের সম্পর্ক অনেক গভীর। আপনি সুস্থ না থাকলে যেমন রোজা রাখতে পারবেন না আবার যেনতেনভাবে রোজা রাখলেও অসুস্থ হতে পারেন। কারণ একটি বিষয়ের সাথে অপরটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
রোজা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যদি আপনি সুস্থ না থাকেন তবে ইবাদতে অবশ্যই ঘাটতি হবে। তাই এ সময় সুস্থ থাকা অতন্ত জরুরি। এ সময় আমরা দীর্ঘ সময় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকি। এর ফলে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে।
মানুষের শরীর একটি যন্ত্রের মতো। তবে অন্য সাধারণ যন্ত্রে মতো না হলেও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সক্রিয় রাখতে প্রয়োজন হয় নানা উপাদান। প্রয়োজনীয় এ সকল উপদানের মূল উৎস হলো খাবার।
রোজা রাখতে আমরা ১০-১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকি তাই শরীরও তার চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় রসদ পায় না। ফলে সেগুলোর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। সাধারণভাবে আমরা যে পরিমাণ রসদ শরীরকে দিয়ে থাকি রমজানের প্রথম দিকে তার ঘাটতি হয়।
অন্তত ১০ রমজান পর্যন্ত শরীর সে ঘাটতি অনুভব করে এবং এর প্রভাব আমাদের শরীরে লক্ষ্য করা যায়। রমজানের পরবর্তী দিনগুলো আমাদের শরীর কম খাবারের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায় বিধায় পরিবর্তনগুলোও ধীরে ধীরে শরীর মানিয়ে নেয়।
কিন্তু যদি আপনার শারীরিক কোন সমস্যা থাকে, পুষ্টির ঘাটতি থাকে, রক্তে সমস্যা থাকে, গ্যাস ও এসিডিটির সমস্যা থাকে তবে শরীর আকস্মিক এ পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে না তাই আমরা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি।
রোজা রাখলে কি শরীর অসুস্থ হয়?
বস্তুত রোজা রাখলে আমরা কেউ অসুস্থ হই না। তবে সুস্থ শরীর নিয়ে রোজা রাখলে আমরা অস্বস্তিতে ভুগি না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোজা রাখা মানে হলো নিজেকে সংযত রাখা, সংযম পালন করা।
সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি রোজার মাধ্যমে আমরা আত্মশুদ্ধি ও নিজেকে মানসিকভাবে পরিবর্তনের সুযোগ পাই। আবার চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করলে এ সময় আমরা শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করি। দীর্ঘসময় অনাহারে থাকায় আমাদের শরীর পুন:গঠিত হয়, সুগঠিত হয়।
এর ফলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ, চর্বি, কোলস্টেরল এবং রক্তের চিনি বা ব্লাড সুগার কমে। এর ফলে হৃদযন্ত্র, পেশী, লিভার এবং ডায়াবেটিসের মতো ভয়ঙ্কর শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাই। বছরের বাকি দিনগুলো সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে থাকার নতুন অধ্যায় শুরু হয় রমজানের পর থেকেই।
তাই রমজানে রোজা রাখতে কিছু নিয়ম পালন করা শরীরের জন্য অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম মেনে রোজা রাখলে শরীর অসুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
রমজানে শরীরে কি কি সমস্যা হয়?
রমজানে শরীরে বিশেষ কোন সমস্যা হয় না। তবে অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। অন্যথায় শরীরে যে কোন ধরণের সমস্যাই হতে পারে।
আগে থেকেই অসুস্থ না থাকলে রমজানে আমরা শারীরিক যে সমস্যা অনুভব করি তা আসলেই কোন সমস্যা নয়। হঠাৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু নিয়মে পরিবর্তন হওযায় আমাদের শরীরেও কিছু পরিবর্তন হয় যাকে আমরা সমস্যা মনে করি।
স্বাভাবিকভাবে রমজানে যে শারীরিক সমস্যাগুলো আমরা অনুভব করি তা হলো:
- শারীরিক দুর্বলতা
- মাথা ঘোরানো
- পানি শূণ্যতা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম
রমজানে শরীর সুস্থ রাখতে করণীয় কি?
রমজানে শরীর সুস্থ রাখার সবচেয়ে সহজ এবং উত্তম উপায় হলো নিয়মিত সালাত আদায় করা, জিকির ও ধ্যান করা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ কাজগুলো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হলেও চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সালাত আদায় করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং নার্ভগুলো (স্নায়ু) বেশি সচল থাকে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। জিকির করলে হৃদপেশী ভালো থাকে। ধ্যান করলে বাড়ে মনের প্রশান্তি। এছাড়াও চিকিৎসকরাও নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গরমে রোজা রাখলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সে কারণে এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। পানিশূন্যতা ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পানি।
রক্তের উপাদান পরিমিত এবং স্বাভাবিক রাখতে পানির ভূমিকা অনেক। তাই একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করা উচিত।
রমজানে সুস্থ থাকার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো ব্যায়াম। মনে হতেই পারে রোজা রেখে শরীর এমনিতেই খুব দুর্বল থাকে, তবে ব্যায়াম করবেন কিভাবে? রোজা রেখেও ব্যায়ম করা যায়। তবে রোজা রেখে কি ব্যায়াম করা যায় সেটি হলো বিষয়।
আপনার শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে নিজের জন্য ব্যায়াম নির্বাচন করুন। অনেক ধরণের ব্যায়াম আছে। নিজে নির্বাচন করতে না পারলে একজন ব্যায়ামবিদ কিংবা শারীরিক শিক্ষার ইনস্ট্রাক্টরের পরামর্শ নিন।
রোজার সময় সুস্থ শরীর ও সুস্থ মন একান্তভাবে কাম। তাই রাখতে ভারী ব্যায়াম না করলেও চলবে। তবে অবশ্যই ব্যায়ামের জন্য একটি নির্ধারিত সময় নির্বাচন করতে হবে। ইফতারের আগে অন্তত আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
মেডিটেশন বা ধ্যান হলো দেহ ও মন সুস্থ রাখার আরেক জাদুকরী উপায়। রোজা রাখার সময় আমরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করলেই মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়ি। এ সময় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে নানা শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
মনকে শক্ত রাখতে মেডিটেশনের চেয়ে ভালো বিকল্পই হয় না। উপযুক্ত পরিবেশে সফলভাবে ধ্যান করতে পারলে মনের জোর বাড়বে। একইসাথে শরীরের হরমোন ঠিকমতো কাজ করবে যা শরীরকেও সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুষ্টিকর খাবার আপনার শরীরকে চাঙ্গা রাখবে। সারাদিন রোজা রাখার পর কি খাচ্ছেন তা যদি একটু ভাবেন তবে সুস্থ শরীরে পুরো রমজান পার করতে পারবেন।
বিষয়টি অত্যন্ত সহজ। আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন তার উপর ভিত্তি করে আপনি ইফতার ও সেহরিতে কি খাবেন তা ঠিক করতে পারেন।
এ বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। গুগলে সার্চ করেই বিভিন্ন খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, দামি খাবার খেলে শরীর বেশি ফিট হয়ে যাবে। খাবারের দামের চেয়ে পুষ্টি ও ক্যালরির দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
FAQ
রমজানে কেন চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার?
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে অবশ্যই রমজানে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। আপনার শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে একজন চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিদ আপনার জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা প্রণয়ন করতে পারে।
তাছাড়া আপনি যদি আগে থেকেই অসুস্থ থাকেন তবে আপনাকে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে তার জন্য তো অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেই হবে।
রোজা রেখে বেশি খেলে কি ক্ষতি হবে?
রোজা রেখে ইফতারের পর বেশি খেলে ক্ষতি হবে বলতে এমন কোন নিয়ম নেই। আপনি আপনার পরিমিত খাবার অবশ্যই গ্রহণ করবেন। সেক্ষেত্রে কম খাওয়া উচিত যার ফলে খাবার সহজে হজম হবে।
বেশি খেলে ক্ষতি বলতে হজমে সমস্যা হতে পারে যা থেকে এসিড ও গ্যাসের উদ্রেক করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে ভোগবেন আপনি।
