অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসা। অর্থনৈতিক উন্নতির উর্ধ্বগতির ফলে মানুষ কম সময়ে, অল্প পুঁজিতে বেশি লাভবান হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সময়ের দ্রুত বদলে যাওয়া নতুন নতুন ব্যবসারও দ্বার উন্মোচন করে দিচ্ছে। অপরদিকে কর্মসংস্থানের অভাব প্রায় সব দেশে লেগেই রয়েছে। সে কারণে তরুণ তরুণীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সঠিক কর্মসংস্থান না থাকায় ঝুঁকছে ব্যবসার দিকে। বেকারত্বের গ্রাসে তাদের পুঁজির সঙ্কট থাকায় অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা হতাশায় নিমজ্জিত তরুণদের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখায়।
স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় ব্যবসার ধরণ ভিন্ন হতে পারে। ব্যবসার পুঁজি অল্প হলেও ব্যবসার আকারের উপর নির্ভর করবে অল্প পুঁজির পরিমাণ কত হবে। এর অন্যথায় পুঁজি বেশি হলেও ব্যবসা লাভজনক করতে অনেক বেশি বেগ পেতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন উদ্যোক্তাদের সুবিধা বিবেচনায় কিছু ব্যবসা খুবই সহজসাধ্য এবং ঝুঁকিও কম। তবে অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা কি কি হতে পারে?
চায়ের দোকান
চায়ের ব্যবসা খুবই লাভজনক এবং চায়ের চাহিদাও অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চা পান করতে পছন্দ করে। শহর কিংবা গ্রাম যে কোন জায়গায় যত্রতত্রই চোখে পড়ে চায়ের দোকান। গ্রামে মধ্যরাত এবং শহরে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় চায়ের দোকান খোলা থাকে। শহরের অনেক চায়ের দোকানে ভিড় সবসময় লেগেই থাকে। চায়ের ব্যবসা করে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। চায়ের দোকান শুরু করতে কি কি লাগবে?
ব্যবসার উপকরণ
চায়ের ব্যবসা খুবই সাধারণ। এ ব্যবসার জন্য প্রাথমিকভাবে দরকার, চা পাতা, চিনি, বিভিন্ন রকম পাত্র, চুলা, জ্বালানি, চেয়ার টেবিল, চায়ের মগ/কাপ ইত্যাদি।
কি কি খেয়াল রাখতে হবে
চায়ের দোকানের জন্য প্রথমে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো স্থান। এমন একটি স্থান/দোকান নির্বাচন করতে হবে যেখানে প্রচুর মানুষের চলাচল থাকে। দ্বিতীয়ত চায়ে ভিন্ন স্বাদ সৃষ্টি করতে হবে যা কাস্টমারদের বার বার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
কফি শপ
কফি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পানীয়। চায়ের দোকানে কফি পাওয়া গেলেও সব চায়ের দোকানে তা মেলে না। তাই কফিপ্রেমীরা চায়ের দোকানের চেয়ে কফিশপেই বেশি ভিড় করে থাকেন। অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার তালিকায় অন্য ব্যবসার পাশাপাশি কফি শপের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। পুঁজি বলতে গেলে শুধু কফি বানানোর উপকরণ কিংবা রেডি মিক্স সাথে একটি কফি মেশিন হলেই শুরু করা যাবে এ ব্যবসা। তবে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে একটু নান্দনিক এবং ক্লাসিক্যাল ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে হয়।
কফি শপ তরুণদের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু। তাই দোকানের জায়গা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই প্রথমে বিবেচনা করতে হবে যেন দোকানের এলাকায় তরুণদের আনাগোনা বেশি থাকে। এছাড়াও অফিস-কাছারি এলাকায়ও কফির বিক্রি ভালো হয়ে থাকে। ব্যস্ত এলাকা হলে যে কোন স্থানেই শুরু করা যেতে পারে এ ব্যবসা। দোকান ভাড়া নেয়ার ইচ্ছা না থাকলে চলমান ভ্যান কিংবা টং (ছোট ঘর বিশেষ) বানিয়েও এ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে।
অনলাইন শপ
অনলাইন শপ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম। এটি এমন এক মাধ্যম যেখানে এক দোকানেই সব কেনাবেচা হয়। সময়ের বিবর্তনে ব্যবসার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে বহগুণ কিন্তু ব্যবসার গণ্ডি ছোট হতে হতে একদম হাতের নাগালে চলে এসেছে। অল্প পুঁজিতে লাভজন ব্যবসা করতে হলে অনলাইন শপ হবে সেরা পছন্দ। কোন কোন ক্ষেত্রে অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবসা করতে হলে নগদ টাকা না হলেও চলে। ভালো সোর্সিং থাকলে পরের পণ্য বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গত এক দশকে বাজারকে চাঙ্গা করে রেখেছে অনলাইন শপগুলো। তবে দু:খজনক হলেও সত্য কিছু প্রতারক চক্র অবশ্যই এর মধ্যে ছিলো। তারা দেশের গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে। সে কারণে সময়োপযোগী কম দামে ভালো পণ্য সোর্সিং করতে পারলে বিনা পুঁজি কিংবা অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে এ মাধ্যমকে স্বাচ্ছন্দ্যে বেছে নিতে পারে যে কেউ। এখানে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তা হলো যে প্লাটফর্মে আপনি ব্যবসা পরিচালনা করতে যাচ্ছে তা কতটা বৈধ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বস্ত।
অনলাইন শপে কি কি বিক্রি করা যাবে?
বলতে গেলে প্রায় সব ধরণের পণ্যই অনলাই প্লাটফর্মে বিক্রি করা যায়। যে কেউ চাইলে বাসায় খাবার রান্না করেও ফুড পান্ডার মতো জনপ্রিয় অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হতে পারেন কিংবা অন্যের রান্না করা খাবারও বিক্রি করতে পারে কমিশনের ভিত্তিতে। এছাড়াও তৈরি পোশাক, শাড়ী, থ্রিপিছ, টি-শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবী, ওষুধ, বই, জুতা, ব্যাগসহ যে কোন ধরণের পণ্যই অনলাইন শপে বিক্রি করা যায়। তবে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বাছাই করলে বিক্রি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অল্প পুঁজিতে লাভবান ব্যবসা করার জন্য নিজেই কম খরচে একটি অনলাইন শপ তৈরি করে নিতে পারে কেউ। এতে বেঁচে যাবে অন্যের শপের কমিশন। বিক্রির পুরো টাকাই পাওয়া যাবে নিজের হাতে।