রামোজি ফিল্ম সিটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফিল্ম সিটি। ভারতের হায়দ্রাবাদে প্রায় ২০০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ ফিল্ম সিটি। ১৯৯৬ সালে রামোজি গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে। বিশাল আয়তন, ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন লোকেশনের সমাহারে গড়ে ওঠা এই সিটি বিশেষত্বের জন্য জায়গা পেয়েছে গিনেস বুকের পাতায়। শুটিং ছাড়াও যে কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে রামোজি ফিল্ম সিটিতে। তেলেগু সিনেমার প্রযোজক রামোজি রাও এই ফিল্ম সিটিটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারে তাই এই ফিল্মি দুনিয়ার নামকরণ করা হয়েছে রামোজি ফিল্ম সিটি। বছরে প্রায় 15 লাখ পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। গড়ে দৈনিক 4100 জন পর্যটকের ভিড় এখানে সারাবছর লেগেই থাকে। পর্যটকদের দর্শনী মূল্য থেকে রামোজি ফিল্ম সিটির দৈনিক আয় প্রায় 45 লাখ ভারতীয় রুপি।
গ্র্যান্ড ওয়েডিং, করপোরেট পার্টি, জন্মদিন, অ্যাডভেঞ্চারসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন দেশি বিদেশি ১০ হাজারেরও বেশি লোক সমাগম হয়ে থাকে। তেলেঙ্গানা রাজ্যের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত শহর হায়দ্রাবাদ। শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামোজি ফিল্ম সিটি। রাজ্যের যে কোন প্রান্ত থেকে সহজেই আসা যায় রামোজিতে। সারা রাজ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রামোজি ফিল্ম সিটির বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সী।
রামোজি ফিল্ম সিটির সামনে পৌঁছালেই চোখে পড়বে সুবিশাল পার্কিং এরিয়া। পার্কিংয়ের পাশেই রয়েছে তথ্যকেন্দ্র। ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য জেনে নেয়া যাবে এই তথ্যকেন্দ্র থেকে। তথ্যকেন্দ্র পেরিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে টিকিট সংগ্রহের জন্য। অনেকগুলো কাউন্টার রয়েছে যেখান থেকে খুশি টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। রামোজি ফিল্ম সিটি ভ্রমণে আপনি পাবেন অনেক ধরণের ট্যুর প্যাকেজ। শিশু বয়স্কদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা প্যাকেজ। পছন্দমতো প্যাকেজ নির্বাচন করে টিকিট সংগ্রহ করুন আর ঢুকে পড়ুন ফিল্মি দুনিয়ায়।
টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখবেন অনেকগুলো বাস আপনার জন্য লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে। লাল, হলুদ কিংবা সাদা যে কোন রঙের বাসে চড়ে বসতে পারেন আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য। সব বাসেই দর্শনার্থীদের বুঝার সুবিধার জন্য থাকবে একজন করে গাইড। বাস চলাকালীন ফিল্ম সিটির যেখানে যেখানে আপনি ভ্রমণ করবেন তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে যেতে থাকবেন গাইড। তার বর্ণনা অবশ্যই ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় আপনাকে তা বুঝে নিতে হবে।
রামোজি ফিল্ম সিটিতে কি কি দেখবেন?
একটি ফিল্ম সিটি যখন তৈরি হয় তখন সিনেমা বানানোর প্রায় সকল উপকরণ তাতে মজুদ রাখা হয়। যেহেতু রামোজি ফিল্ম সিটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফিল্ম সিটি তাই এখানে সিনেমা তৈরি করার জন্য যত ধরণের উপকরণ, সেট, দৃশ্য প্রয়োজন সব কিছুরই ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। ভৌতিক দৃশ্য ধারণ, পাহারি এলাকার আবহ, থ্রিলার মুভির প্রয়োজনীয় উপকরণ, বিদেশি শহরের দৃশ্য, ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থাপনা, ঝর্ণা, হাইওয়ে, বস্তি, রেল স্টেশন, বিমান বন্দর, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, খেলার মাঠ, গলফ মাঠ, পাহাড়, নদী, আধুনিক শহর, শপিং মল এবং প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই রয়েছে।
বাহুবলি সিনেমার সেট
এ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ সিনেমা বানানো হয়েছে রামোজি ফিল্ম সিটিতে। সিনেমা বানানোর পর সব সিনেমার সেট ভেঙ্গে ফেলা হয়। এখানে দৃশ্যমান বেশিরভাগ স্থাপনা নকল। কাঠ, রড এবং স্টিল দিয়ে এসব কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে যা সিনেমাওয়ালারা তাদের প্রয়োজনমতো সাজিয়ে নিজস্ব সেট তৈরি করেন। ব্যবসা সফল সিনেমা বাহুবলির সেট সিনেমা বানানার পরও দীর্ঘদিন তা অক্ষত রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। গত কয়েক বছর ধরে এই সেটের অংশগুলো পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে। পর্যটকরাও সবচেয়ে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন এই সেটে।
মুঘল গার্ডেন
দিল্লীর মুঘল গার্ডের অনুকরণে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে মুঘল গার্ডেন। ঐতিহাসিক সিনেমা বানানোর জন্য কিংবা দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য এই গার্ডেনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সাহস, রামোজি ফিল্ম সিটির একটি অ্যাডভেঞ্চার এলাকা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন গেমিং এর ব্যবস্থা। প্রশিক্ষিত প্রশিক্ষক রয়েছেন যারা আপনাকে আগেই প্রশিক্ষণ দিয়ে দেবেন। এই প্রশিক্ষণের নাম হারনেস কোর্স।
ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য
সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে রামোজি ফিল্ম সিটি। কারো ইচ্ছা হলেও রাত কাটানোরও ব্যবস্থা আছে এখানে। তারা এবং সিতারা নামে বেশ বড় হোটেলে দুইদিন এক রাতের প্যাকেজে খরচ পড়বে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এছাড়াও সারাদিন ঘুরার জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ:
ডে ট্যুরিজম প্যাকেজ এর আওতার মধ্যে যা আছে জেনারেল ডে ট্যুর। এই প্যাকেজে বাচ্চাদের জনপ্রতি ৯৫০ রুপি এবং বড়দের জন প্রতি ১১৫০ রুপি খরচ করতে হবে। হলিডে কারনিভাল ডে ট্যুরে জনপ্রতি ১২৫০ রুপি, বাহুবলি প্রিমিয়াম এক্স প্যাকেজে জনপ্রতি ২৩৪৯ রুপি, হুবলি নুন ফিস্টা জনপ্রতি ২১৪৯ রুপি খরচ হবে। এছাড়াও স্পেশাল প্যাকেজে থাকছে ফিল্ম সিটি ভিজিট, এ্যাডভেঞ্চার এক্সিপেরিয়েন্স এবং বাহুবলি সেট ঘুরে দেখা। স্পেশাল প্যাকেজে খরচ হবে জনপ্রতি ১৭৫০ রুপি এবং প্রবেশের সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
