বছরের ছয়বার বদলায় বাংদেশের ঋতু। দেশে দেশে ভিন্ন আবহাওয়া তাই ঋতুর ধরণও আলাদা। দেশ, ঋতু, পরিবেশ ভিন্ন হলেও মানুষ সবখানে একই রকম। সবাই রক্ত, মাংস, হাড়, চামড়া দিয়ে তৈরি। তাই মানুষের ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। প্রখর রোদের কারণে ত্বক পুড়তেই পারে। ত্বকের যত্নের কথা বলতে গেলে তাই সব পরিবেশ, সব দেশ এবং সব মানুষের জন্য প্রায় একই রকম। ত্বকের বিভিন্ন ধরণের জন্য একেক ধরণের ত্বকের ক্ষেত্রে যত্নের ধরণও একেক রকম হয়ে থাকে। চলুন জেনে নিই গরমে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়। কিভাবে ত্বক সতেজ রাখা যায়?
ত্বক ভালো রাখার প্রধান উপায় হলো ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। সে কারণেই গ্রীষ্ম এবং শীতে ত্বকের যত্নের ধরণও হয় আলাদা আলাদা। গ্রীষ্মে বাইরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে শীতে থাকে অনেক কম। শরীরের আর্দ্রতাও এই দুই ঋতুতে কম বেশি থাকে। ত্বকের কোষগুলোতে জলীয় অংশের পরিমাণ কমবেশি হলে ত্বকের বাইরের অংশে দেখা যায় ব্যাপক পরিবর্তন। তাই দুই সময় ত্বকের যত্ন দু্ই রকম।
গরমে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়?
গরমের ত্বক সতেজ রাখতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভেতর থেকে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্রয়োগ করতে হয় নানা উপায়। তাহলে কী কী উপায় আছে চলুন জেনে নেয়া যাক।
মৌসুমি ফল
সারা বছরই কমবেশি ফল বাজারে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ফলই রাসালে যাতে জলীয় অংশের পরিমাণ অনেক বেশি। নি:সন্দেহে সব ফলই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তাই শুধু এর ব্যবহার জানতে হবে। এতে শরীর যেমন ভালো থাকে তেমনি ত্বকেরও অনেক যত্ন নেয়া হয়। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন,
ফলের মধ্যে খাদ্যশক্তি থাকে, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর চর্বি বের করে দেয়, তাই ফল সবার জন্য উপকারী। পুষ্টিমানের দিক থেকেও সব ফেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, খনিজ পদার্থ থাকে। বিশেষ করে রঙিন ফলে লাইকোপেট আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত জিনিস দূর করে দেয় এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে।
বাঙ্গি
বাঙ্গি আমাদের দেশের অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল। পছন্দের হিসেবে বলতে গেলে অনেকই বাঙ্গি পছন্দ করেন আবার অনেকেই করেন না কিন্তু ত্বকের যত্নে বাঙ্গির গুণাগুণ অসাধারণ। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা বাঙ্গির ফেস প্যাক ব্যবহার করে নিশ্চিত উপকার পাবেন।
বাঙ্গির ফেস প্যাক
প্রথমে এক টেবিল চামচ বাঙ্গির পেস্ট নিয়ে তার সাথে এক টেবিল চামচ দুধ এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে সবগুলো উপাদান মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তিনটি উপাদানের মিশ্রণে যে প্যাকটি তৈরি হবে তা এবং ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
আম
ফলের রাজা আম। আমের স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টি সব মিলিয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি আম। ত্বকের যত্নে আম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও সোডিয়াম। এছাড়া খনিজ লবণ, ভিটামিন সি, বি, ই, ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, সেলেনিয়াম, টারটারিক এসিড, এনজাইম। চুলপড়া, চোখের নানা রোগসহ খসখসে ত্বকের যত্নে আমের জুড়ি নেই। আমে বিদ্যমান ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’ ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়ের কাজ করে।
ত্বকের যত্নে আম কিভাবে কাজে লাগে?
ত্বক পরিস্কার রাখতে আমের সঙ্গে ওটমিলের মিশ্রণ তৈরি করে যে কোন ত্বকে ব্যবহার করা যাবে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত কিংবা ত্বকে সান বার্ণ বা রোদে পোড়া দাগ রয়েছে তারা আমের সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের যে কোন অংশের মরা কোষ (Dead Cell) থাকলে তারা আমের সঙ্গে চালের গুড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে কতক্ষণ অপেক্ষা করুন। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কাঁঠাল
কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের রয়েছে নানা গুণ। এতে প্রচুর এনার্জি রয়ছে। ত্বকের যত্নে কাঁঠাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের শরীরে কালো কালো দাগ দেখা যায় তারা কাঁঠালের রসের সঙ্গে দুধ ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে দুধ ও মধুর পরিবর্তে তিলের তেল ব্যবহার করা ভালো। যারা কাঁঠাল পছন্দ করেন না তারা এই পদ্ধতিটি এড়িয়ে যেতে পারেন।
প্রসাধনী ব্যবহার
সান বার্ণ ক্রিম বা সানস্ক্রিন
আমাদের প্রতিদিনই কোন কোন কাজে বাইরে বের হতে হয়। দিনের বেলায় বাইরে সূর্যের আলো ও তাপ দুটোই বেশি। এছাড়া সূর্য থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষতিকর বিভিন্ন রশ্মিতো আছেই। সূর্যের ইউভি-এ এবং ইউভি-বি রশ্মি ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। এই ধরণের রশ্মির প্রভাবেই মনে হয় ত্বক যেন পুড়ে গেছে। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিণ মাখুন। এছাড়াও যারা ঘরে থাকেন তারাও এসপিএফ-৩০ যুক্ত সানস্ক্রিণ ব্যবহার করতে পারেন।
বাইরে বের হওয়ার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
- ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে ডিওডোরেন্ট বা পারফিউম ব্যবহার করুন।
- সানগ্লাস ও ছাতা সঙ্গে রাখুন
- ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
- সাদা কিংবা যে কোন হালকা রঙের পোশাক পরুন
বাইরে থেকে বাসায় ফিরেও ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সর্বোপরি ধুলা-বালি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন তাতে ত্বকে কোন রোগ বালাই থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যাবে।