এমপি আনার হত্যার বিচার কোথায় হবে? এ প্রশ্নে তোলপাড় আদালতপাড়া। ভারত নাকি বাংলাদেশ নাকি অন্য কোথাও? ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ আনোয়ারুল আজমী আনার হত্যার বিচার নিয়ে দ্বিধান্বিত আইনজীবিরা।
দুই দেশের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী অপরাধ সংঘটনের স্থানেই বিচারের বিধান রয়েছে। তবে আনার হত্যার ধরণ এবং পূর্বাপর ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বিচার নিয়ে দ্বিধা শুরু হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরণের ঘটনার বিচার দুই দেশেই হতে পারে।
গত ১২ মে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত হয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতে পাড়ি দেন এমপি আনার। চিকিৎসাকালীন পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানাধীন মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামের এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেন তিনি। তবে কোন হাসপাতালের কোন ডাক্তারের চিকিৎসা নেবেন এ ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি বের হন তবে আর বাসায় ফেরেননি।
তাকে না পাওয়া গেলে পরে কলকাতা পুলিশ জানায় নিউ মার্কেটের সঞ্জিবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজে তাকে ঐ অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে দেখা গেছে তবে বের হতে দেখা যায়নি সন্দেহে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে বলছে কলকাতা পুলিশ। তবে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়নি বা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্ন খবরে প্রকাশ ও পুলিশের ভাষ্যমতে, তাকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঐ অ্যাপার্টমেন্টের সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে লাশের এক খণ্ড পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের।
সঞ্জিবা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছে সে সময় ঐ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আনোরুলের বন্ধু শাহীন। দাবি উঠেছে হত্যার মূলহোতা শাহীন পরিকল্পিতভাবে তাকে মুম্বাই থেকে এক কসাইকে খবর দিয়ে এনে এ ফ্ল্যাটে হত্যা করে। পরে মাংস টুকরো টুকরো করে লাগেজে করে বাইরে নিয়ে যাওয়া যাওয়া হয়। আর এই হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে কয়েক জনকে আটকও করে কলকাতা পুলিশ।
এমপি আনারকে সত্যিই হত্যা করা হয়েছে?
এমপি আনার কি আসলেই হত্যার শিকার নাকি গুম হয়েছেন এ বিষয়টি স্পষ্টতই ধোয়াশা। যদি এমপি আনারকে সত্যিই হত্যা করা হয়ে থাকে তবে কলকাতায় কেন? যখন এম পি আনার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছিলেন তার সময় থেকে অপরাধীরা বের হওয়া পর্যন্ত পুরো সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ কি আদৌও আছে? মাঝখানে সিসিটিভি বন্ধ ছিলো আর এমন সময় তিনি পালিয়ে যাননি তো? তার বন্ধু গোপালের ভূমিকা কি?
এমপি আনার যদি চিকিৎসার জন্যই ভারতে যাবে তবে তার মেয়ে অপহরণের মামলা কেন করবেন? মেয়ে কি জানতেন না বাবা অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন? তবে এটি পুরোটাই নাটক? নাটকের স্কিপ্টে কোথাও ভুল হয়ে গেলো কি? এমন হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে। অথচ এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে হত্যাকারীর বিচার নিয়ে। কোথায় বিচার হবে কিভাবে বিচার হবে।
এমপি আনার কি আসলেই খুন হয়েছেন? নাকি আত্মগোপনে আছেন নাকি অন্য কিছু? আগে সে বিষয়টি নিশ্চিত না হলে নিরপরাধীরা শাস্তি পেলেও পেতে পারে।
এমপি আনার হত্যার বিচার কোথায় হবে?
এমপি আনার বেচে আছেন নাকি মারা গেছেন বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় অথচ তার হত্যাকারীদের বিচার দেশে হবে নাকি বিদেশে এ নিয়ে বেশ তোড়জোর আর সংশয়। কেউ ভাবছেন বিচার হবে বাংলাদেশে আবার কেউ ভাবছেন বিচার হবে ভারতে।
কেউ আবার ভাবছেন বিচার হবে তো? অথবা কেউ ভাবছেন নিরপরাধীরা ফাঁসিতে ঝুলবে না তো। আর না হয় যার হত্যার বিষয়টিই ধোঁয়াশা হত্যার বিচারিক কাজে এতটা তাড়াহুড়ো কেন? সরকার তো বলেই দিয়েছে তিনি সরকারিভাবে চিকিৎসার জন্য যাননি কিংবা ভারত সরকারকেও জানিয়ে যাননি।
কোথায় হবে এমপি আনারের হত্যার বিচার?
কেউ বলছেন এমপি আনারের হত্যার বিচার হবে ভারতে কারণ ঘটনাটি ভারতে সংঘটিত হয়েছে। আবার কেউ বলছেন বিচার হবে বাংলাদেশে কারণ হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশ। কেউবা বলছেন অপহরণ হয়েছেন বাংলাদেশে। এই অমীমাংশিত বিষয়ের সিদ্ধান্ত যে যাই ভাবুক তা শুধুই আদালত এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এখতিয়ারভূক্ত। সব ভাবনাই মিথ্যে হবে যখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।